ছবি: সংগৃহীত
দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কে পুলিশের সর্বাত্মক নিরাপত্তা উদ্যোগ, সিসি ক্যামেরা, বাড়তি টহল, চেকপোস্ট এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম সত্ত্বেও ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকামুখী পশুবাহী যানবাহনগুলোতে হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা।
হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদারে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এনে রাতদিন টহল, বাসে তল্লাশি এবং ছদ্মবেশী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্থাপন করা হয়েছে ১,৪২৭টি আধুনিক সিসি ক্যামেরা, যা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মহাসড়কেও বসানোর উদ্যোগ রয়েছে। তবুও থামছে না ডাকাতি। হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, শুধু জানুয়ারি-মার্চেই ১৭টি ডাকাতির ঘটনায় ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত অঞ্চলটিকে "হটস্পট" হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম, সোনারগাঁ এলাকায় দিনে-রাতে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বাসযাত্রী, প্রবাসী, এমনকি প্রাইভেটকার চালকরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ‘র্যাব’ বা ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে অপহরণ, লুট এবং শারীরিক হামলার ঘটনাও ঘটছে।
কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে মাঝপথে ট্রাক থামিয়ে গরু লুট বা অন্য হাটে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ভয়াবহতা ঠেকাতে আগেভাগেই যানবাহনে গন্তব্যের ব্যানার লাগানো ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির দাবি উঠেছে।
রাজশাহী ও আশপাশের অঞ্চলে গত তিন মাসে অন্তত ৭টি বিআরটিসি বাস ডাকাতির শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে। ফলে যাত্রী ও চালক উভয়ই আতঙ্কে রয়েছেন। রাজশাহী পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রফিক আলী পাখি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে অনেক চালকই রাস্তায় নামতে চাইবে না।”
সাভার অংশের ব্যাংক টাউন ও পুলিশ টাউন এলাকায় দিনের বেলায়ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ফেব্রুয়ারিতে শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাসে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। অথচ এই মহাসড়কে একাধিক চেকপোস্ট থাকলেও ঘটনা প্রতিরোধে সফল হয়নি প্রশাসন।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জানান, “গত ঈদে কড়া নিরাপত্তা ছিল, মাঝখানে কিছুটা শিথিলতা এসেছিল। এবার ঈদুল আজহা ঘিরে আবারও কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” একইসঙ্গে গাড়ি সংকট মেটাতে আইজিপি নিজ উদ্যোগে গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছেন এবং ঈদের আগে আরও অতিরিক্ত ফোর্স যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হলেও মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক ঘটনায় চালক-হেলপারদের জড়িত থাকার তথ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অপরদিকে, জামিনে মুক্ত ডাকাতরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠছে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
ঈদ সামনে রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রয়োজন গোয়েন্দা নজরদারি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও স্থায়ীভাবে চিহ্নিত হটস্পটে নিয়মিত অভিযানের বাস্তবায়ন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



