
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় শনিবার ভোর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইসরায়েলি সরকারের চুক্তি অনুমোদনের ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই এটি বাস্তবায়িত হবে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে সেখানকার নাগরিকদের জন্য দীর্ঘদিনের সহিংসতা সাময়িকভাবে বন্ধ হবে এবং দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তির পথে পদক্ষেপ শুরু হবে।
সংবাদ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে মুক্তি প্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনও জীবিত আছেন। সূত্রের খবর, এই উদ্যোগের মাধ্যমে গাজা অঞ্চলে শান্তি প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা এবং দীর্ঘমেয়াদি মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের পথ তৈরি করা হচ্ছে।
এই যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি গাজার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে সংঘাত দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
হামাসের নির্বাসিত গাজাপ্রধান খালিল আল-হাইয়া সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে নিশ্চিতভাবে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন যে যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হচ্ছে। আল-হাইয়ার মতে, এটি একটি “মানবিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” যা গাজার সাধারণ মানুষকে সহিংসতার হাত থেকে সাময়িক মুক্তি দেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এর ফলে গাজায় পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে এই সময়কাল জিম্মিদের মুক্তি এবং সংঘর্ষ বন্ধ রাখার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে ভরসা ও আস্থা পুনঃস্থাপন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে চুক্তি কার্যকর হলেও, অঞ্চলটিতে সামরিক সতর্কতা ও সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় থাকবে। গাজা ও ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও সীমান্ত অঞ্চলে নজরদারি চালিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি এই যুদ্ধবিরতির মানিৎর জন্য পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করবে।
উল্লেখ্য, গাজায় চলমান সংঘাতের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সংঘাতের কারণে শহরের অবকাঠামো ধ্বংস, মানবিক সংকট এবং হাজার হাজার মানুষের স্থানচ্যুতি হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতি স্থানীয় জনগণকে শিথিল করার সুযোগ দেবে এবং মানবিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ শুরু করার সুযোগ তৈরি করতে পারে। এতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক উদ্যোগ সমর্থন পাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ