
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব অর্থ পুনরুদ্ধার করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অর্থ ফেরত আসার আগেই—এক বছরের মধ্যেই বিদেশে থাকা এসব পাচারকারীর সম্পদ জব্দ করার কাজ শেষ করা যাবে।
সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গভর্নর। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা এখন একটি গঠনমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের অর্থ পাচারকারীদের শনাক্ত করে তাদের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এতে সময় লাগবে, কারণ আন্তর্জাতিক আইন ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির জটিলতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি আদালতের সহায়তা নিতে হয়। এগুলোর সবকিছু নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসারে করতে হয়। এজন্য চার-পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে।”
তবে আশার কথা হলো, সম্পদ ফেরত না এলেও, বিদেশে থাকা পাচারকারীদের নামে থাকা সম্পত্তি—যেমন শেয়ার, বাড়ি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট—এক বছরের মধ্যেই জব্দ করা যাবে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, “আমরা এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে সম্পদ জব্দের মাধ্যমে একটি দৃশ্যমান পদক্ষেপ রাখা যায়। এতে জনগণের আস্থা বাড়বে, একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজদের জন্য বার্তা যাবে যে তারা ছাড় পাবে না।”
পলাতক পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থ দেশের দরিদ্র জনগণের কল্যাণে ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “আমরা পরিকল্পনা করছি, এই অর্থ দিয়ে একটি জনহিতকর ফান্ড গঠন করা হবে। এই ফান্ডের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এতে কেবল অর্থ ফেরত আসবে না, বরং জনগণের প্রত্যক্ষ কল্যাণ নিশ্চিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু প্রতীকী নয়; এটি একটি বাস্তবিক প্রয়াস। অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতারও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার পথে আইনি প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের কথাও বলেন গভর্নর। “আমরা চাই, আইনের যথাযথ ধারা মেনেই যেন সব কাজ করা হয়। তবে যেসব ক্ষেত্রে আইন যুগোপযোগী নয় বা বাধা সৃষ্টি করছে, সেখানে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে আমরা প্রস্তুত,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সাধারণ জনগণ এখন দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় দেখতে চায়। আমরা সে প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই কাজ করছি।”
আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF), ইন্টারপোল, বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এই অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া আরও বেগবান করা হবে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। তবে আমরা যেসব দেশের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছি, সেসব দেশের সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমরা তাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করছি এবং কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলছি।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে এতে সময় লাগবে—এ কথা জানিয়ে জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে একটি জনহিতকর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার পর তা দরিদ্র জনগণের কল্যাণে ব্যবহারের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সরকার। এখন দেখার বিষয়, এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হয় এবং অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়াটি কতটা স্বচ্ছ ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ