
ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সংঘটিত আলোচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানো সজল মিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবশেষে ৯ মাস পর হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা রুনা বেগম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয়ে আসামি করা হয়েছে।
গত ১৬ মে রাতে এই মামলাটি দায়ের করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। যদিও বিষয়টি জনসমক্ষে আসে রোববার (১৯ মে) রাতে। মামলার বাদী রুনা বেগম (৪৭) অভিযোগ করেন, সেদিন তার ছেলে কোনো রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না; তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার দাবি।
মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে নাম রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার। এছাড়া মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের।
২০২৪ সালের ২০ জুলাই, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবস্থান নেয় একদল ছাত্র-যুবক। নিহত সজল মিয়াও সেই অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সশস্ত্র একটি দল আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে সজলের পেটে গুলি লাগে।
সজলকে তাৎক্ষণিকভাবে চিটাগাংরোডের সুগন্ধা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনুর আলম জানিয়েছেন, “সারা দেশে গ্যাজেট প্রকাশের পর নিহত সজলের মা মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা মামলাটি গ্রহণ করেছি এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”
এই মামলার ফলে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মামলাটিকে ‘প্রতীকী বিচার চাওয়ার প্রয়াস’ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে বলছেন, এটি জনরোষের প্রতিফলন মাত্র। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, “এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নাম রয়েছে, তাই এর তদন্তে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যে কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। তবে আইনি প্রক্রিয়া যেন নিরপেক্ষ থাকে, সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
সজলের পরিবার তাদের সন্তানের হত্যার বিচার চায়। দীর্ঘ ৯ মাস পর মামলা দায়ের হলেও তারা আশাবাদী, ন্যায়বিচার একদিন মিলবেই। তবে এই মামলা কতটা এগোবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ