
ছবি সংগৃহীত
বর্তমান সংবিধানের আলোকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তৃণমূল বিএনপি।
প্রথম কাউন্সিলে দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান মেনে নির্বাচনে যাব আমরা। আমাদের বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, প্রশাসনসহ অন্যরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে জনগণের প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে সরকারের সমর্থনে দলটি নিবন্ধন পেয়েছে এবং সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। এই দলের চিন্তাভাবনা নিজেদের। এটি “কিংস পার্টি” নয়, এটি জনগণের পার্টি। কিংস পার্টি গঠিত হয়েছিল এক-এগারোর সময়।’
৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে কেবল যাত্রা শুরু করলাম। অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যারা যোগাযোগ করছেন, তারা নিজ নিজ এলাকায় কতটা জনপ্রিয় তা যাচাই-বাছাই করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আশা করছি নির্বাচনের আগেই আমরা আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারব।’
শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। আর তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নাজমুল হুদা জনগণের পক্ষে রাজনীতি করেছেন। তিনি নিজেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়েছিলেন। এ কারণে বিএনপি তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছিল। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলেই কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ভাবব। কাউন্সিল হয়েছে মাত্র, এখনো দলের নেতারা আমরা একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারিনি। আগে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। তারপর আলোচনা-পর্যালোচনা করে নির্বাচনের বিষয়ে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। তবে একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জনগণ বিগত দুটি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। জনগণের ভোট প্রদানের সুযোগের বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে আমরা যাব না।’ তিনি বলেন, ‘নাজমুল হুদার মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে, যার উপজেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। তারাই মূলত আমাদের দলের শক্তি। তা ছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবব। আমরা যেখানে সুবিধা পাব, সেখানে যাব।’
এর আগে গত রবিবার তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন। তার সঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরীও যোগ দেবেন। এরপর ওই দিনই জানানো হয় মঙ্গলবার দলের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে দলের সভাপতি হচ্ছেন শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব হচ্ছেন তৈমূর আলম খন্দকার।
গতকাল বেলা ১১টায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির কাউন্সিল শুরু হয়। কাউন্সিলে শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
স্বাগত বক্তব্যে দলটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান অন্তরা সেলিম হুদা বলেন, ‘বিএনপি সরকারের সময় মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা দিয়েছিলেন এবং মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন নাজমুল হুদা। তার এই রূপরেখাকে যদি সম্মানিত করা হতো, তবে আজকের দিনে এসে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। সব সরকারেরই ক্ষমতা ছাড়তে কষ্ট হয়। ক্ষমতায় থেকে একজন মিনিস্টার হয়েও জনগণের কাছে এমন ফর্মুলা দিয়ে দেশপ্রেম ও বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন নাজমুল হুদা। আমরা তা আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কেয়ারটেকার সরকারের জন্য বিএনপি কত আন্দোলন করছে। অথচ সেই সময় বিএনপিই ক্ষমতায় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন তৃণমূল বিএনপি গত ১৬ ফেরুয়ারি নিবন্ধন পায়। এর তিন দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার বাবা তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ইন্তেকাল করেন। এর কিছুদিন পর আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করি। এমন পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্ব নেওয়া আমার জন্য কষ্টকর ছিল। দলের একজন কর্মী হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। আমার বাবা ছিলেন জননেতা, জনগণের কাছের মানুষ, অত্যন্ত কর্মীবান্ধব। তিনি বারবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।’
২৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা : কাউন্সিল ও কর্মী সমাবেশের দ্বিতীয় পর্বে আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন কাউন্সিলের সঞ্চালক ও দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. আক্কাস আলী খান। ২৭ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করা হয়। সঞ্চালক আক্কাস হন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। দলটির ভাইস চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন কে এ জাহাঙ্গীর মজুমদার, মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, মোখলেসুর রহমান ফরহাদী, দীপক কুমার পালিত, মেনোয়াল সরকার ও ছালাম মাহমুদ।
যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান, ফয়েজ চৌধুরী, তালুকদার জহিরুল হক, রোখসানা আমিন সুরমা। কোষাধ্যক্ষ (ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদা) নির্বাচিত হয়েছেন শামীম আহসান।
সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শাহজাহান সিরাজ (বরিশাল), আকবর খান (চট্টগ্রাম)। এ ছাড়া সহসাংগঠনিক সম্পাদক কামাল মোড়ল, দপ্তর সম্পাদক হিসেবে একে সাইদুর রহমান ও মো. রাজু মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কাজী ইব্রাহীম খলিল সবুজ, যুববিষয়ক সম্পাদক শাহাবউদ্দিন ইকবাল, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশানুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক স্থপতি নাজমুস সাকিব, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক সাগর ঘোষ এবং স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।