
ছবি সংগৃহীত
চট্টগ্রাম: অছাত্র, বিবাহিত এবং চাকরিজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা মনে করছেন, যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন তারা।
গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ৪২ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন পটিয়ার রবিউল ইসলাম রবি এবং সদস্য সচিব হয়েছেন কর্ণফুলী উপজেলার মো. কামরু উদ্দিন সবুজ।
এই কমিটি ঘোষণার পর থেকে নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। অছাত্র, চাকরিজীবী, বিবাহিদের পদ দেওয়াসহ এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কমিটিতে পদ বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তৃণমূলের এই শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এই কমিটির সদস্য সচিব কামরু উদ্দিন সবুজের বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানে। তিনি চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ও.আর নিজাম রোড শাখার সিনিয়র ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত।
এ বিষয়ে জানতে সবুজকে ফোন করা হলে তিনি চলতি বছরের মে মাসে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি শাখার সার্ভারে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সর্বশেষ জুন মাসের বেতনও সবুজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।
এই কমিটির আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম রবি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি সিকদার হজ কাফেলা ট্যুরস অ্যাণ্ড ট্রাভেলস এবং শিন ওভারসিজ লিমিটেড নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন। শুধু রবি বা সবুজ নন। এদের ছাড়াও একাধিক চাকুরীজীবি এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফিরোজ মেট লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর সবুর একটি ব্যাংকের ফিল্ড অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আরেফিন রিয়াদ ইস্টার্ন ব্যাংক বোয়ালখালী শাখায় কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে বিবাহিত নেতার সংখ্যাও কম নয় এই তালিকায়। যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈমুল আলম নাঈম ও ফরহাদুল ইসলাম, রাশেদুল কবির সহ একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য বিবাহিত। অনেকেই এক ও দুই সন্তানের জনক বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী জিয়াউল হক জোনায়েদ অভিযোগ করে বলেন, আমরা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে রাজনীতি করে এসেছি। আমাদের কমিটিতে স্থান হয়নি। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে যাদের পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে চাকুরীজীবী ও বিবাহিতসহ অর্ধশিক্ষিত অনেকে রয়েছে।
সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন মো. সালাহ উদ্দীন। তিনি আক্ষেপ করে জানান, জীবনের সোনালী দিনগুলোর অধিকাংশ সময় রাজনীতির মাঠে কাটিয়েছি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দলের (বিএনপির) একজন কর্মী হিসেবে নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর কেটেছে। নির্বাচন এলে পুলিশের তাড়া খেয়ে ঘরের বাইরে থেকেছি রাতের পর রাত। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে বিএনপির ডাকা ‘সরকার পতন আন্দোলনে’ যোগ দিতে গিয়ে ঢাকার নয়া পল্টন থেকে গ্রেপ্তার হয়ে এক মাসেরও বেশি সময় জেল খেটেছি। এখনও প্রতি মাসে হাজিরা দিতে হয়। অথচ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটির কোন অংশে আমার ঠাঁই হয়নি।
পদবঞ্চিত একাধিক ছাত্রনেতা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করার পেছনে জেলা বিএনপির সিনিয়র এক নেতাকে দায়ী করছেন। শুধুমাত্র ওই নেতার অনুসারীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বঞ্চিতদের।
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বঞ্চিত ছাত্রনেতারা। এসময় দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রদলের এই কমিটি নিয়ে সিনিয়র নেতারা বাণিজ্য করেছেন। দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করা কর্মীদের স্থান না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বেশিরভাগ কর্মীকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ঘোষিত দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা আমাদের নজরে এসেছে। কমিটি হলে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তবে যারা কমিটিতে স্থান পায়নি তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করব।