
ছবি: সংগৃহীত
রোববার (১৮ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এক ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনার জন্ম দেয় একদল বরখাস্ত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্য। তাঁরা তাঁদের পূর্বের পদে পুনর্বহাল, শাস্তি মওকুফ, বকেয়া আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বেশ কিছু দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে বিক্ষোভে অংশ নেন। এসময় তাঁরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য প্রদান করেন এবং তাঁদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের মানসিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সাবেক সদস্যদের কথা শোনা এবং সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসারে সমাধানের পথ তৈরি করা। প্রতিনিধি দল তাদের দাবিগুলো অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে শোনেন এবং জানান যে, এসব আবেদন যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে সমাধানের চেষ্টা চালানো হবে।
আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই বিক্ষোভের পেছনে থাকা অভিযোগ ও দাবিগুলো যেন কোনো তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারের অধীনে উপস্থাপন না করা হয়। বরং অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি তুলে ধরার অনুরোধ জানানো হয়, যাতে প্রতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে সমাধান সম্ভব হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত ১৪ মে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এই ধরনের মোট ৮০২টি আবেদন ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকি আবেদনগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এগুলো মানবিকতা ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতা সহকারে বিবেচনা করছে।
তবে আইএসপিআর দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, দিনভর সহমর্মিতা প্রদর্শনের পরও শেষপর্যায়ে কিছু অনভিপ্রেত ও উসকানিমূলক ঘটনার অবতারণা হয়। প্রতিনিধি দল স্থান ত্যাগ করার সময় কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বরখাস্ত সেনাসদস্যের প্ররোচনায় তাদের গাড়ির সামনে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং অশ্রাব্য ভাষায় স্লোগানও দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী শান্তিপূর্ণ আচরণ বজায় রেখেছিল, তবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধ্য হয়ে কিছু বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আইএসপিআর পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়, এমন যেকোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড, যা জনস্বার্থবিরোধী কিংবা বাহিনীর সুনাম ও ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বারবারই প্রমাণ করে এসেছে যে, তারা একটি সুশৃঙ্খল, মানবিক ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক কাঠামো ও বাহিনীর নিয়মনীতি মেনে চলার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।
এই প্রসঙ্গে আইএসপিআর তাদের বিবৃতিতে আরও বলেন, সেনাবাহিনী সকল আবেদন এবং অভিযোগ অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে গ্রহণ করে এবং প্রতিটি বিষয় যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে থাকে। তাই বাহিনীর সুনাম বজায় রেখে, কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের ভেতরে থেকেই যেকোনো দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করাই সবার জন্য উত্তম।
এদিকে বিক্ষোভের এই পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে কিছু প্রশ্ন ও উদ্বেগের জন্ম হয়েছে। সাবেক সেনাসদস্যদের মানবিক সমস্যাগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, বিক্ষোভের আচরণ এবং তার পরিণতি নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
বিশ্লেষকদের মতে, যে কোনো বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় সাবেক সদস্যদেরও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য।
সবশেষে, আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্য, সহমর্মিতা ও মানবিক বিবেচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করে যাবে। পাশাপাশি সবাইকে সাংবিধানিক কাঠামো ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়।
এটি শুধুই একটি সঙ্কট নয়, বরং একটি সুযোগ— বাহিনী এবং তার প্রাক্তন সদস্যদের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ ও সমাধানের একটি নতুন পথ খুঁজে বের করার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ