
ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৭৬১ গ্রাম (৬৫.২ ভরি) স্বর্ণসহ দুইজনকে আটক করেছে এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। আটককৃতরা হলেন মোঃ কবির হোসেন (৫৩) এবং কুদ্দুছ (৪১)। বিশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোঃ কবির হোসেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর বোর্ডিং ব্রীজ অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রাত ২:২২ মিনিটে (১০ অক্টোবর দিবাগত রাত) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমণ ১ নং টার্মিনালের ৩ নং গ্লাস গেইটের সামনে। সূত্রের খবর, মোঃ কবির হোসেন কুদ্দুছকে একটি ছোট হাতব্যাগ হাতে দিচ্ছিলেন। এ সময় উপস্থিত যাত্রীদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে সেখানে অস্থিরতা দেখা দেয়। ঘটনা স্থলে উপস্থিত এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ফোর্স এগিয়ে আসে এবং ব্যক্তিদের টার্মিনালে আসার উদ্দেশ্য জানতে চায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক উত্তর দেয়। পরে সন্দেহভাজনদের বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ অফিসে নিয়ে এসে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হয়। তল্লাশিকালে ৩টি নীল রঙের ছোট ব্যাগ থেকে ৪টি গোল্ডবার এবং অন্যান্য স্বর্ণালংকারসহ মোট ৭৬১ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, এই স্বর্ণালংকারগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে অজ্ঞাতনামা যাত্রীর মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনা হয়েছে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মোঃ কবির হোসেন ও কুদ্দুছ দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এবং রিসিভারের ভূমিকায় কাজ করে আসছেন। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক চোরাচালান নেটওয়ার্কের সাথে সরাসরি সংযোগ রেখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা নং-০৮, তারিখ-১০/১০/২০২৫, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ বি এর ১ (বি) ও ২৫-ডি ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে এবং চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যদের সনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট (১৩) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অপারেশনাল কমান্ডার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা বিমানবন্দর এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধ এবং অন্যান্য অপরাধ দমনে নিয়মিতভাবে সতর্ক নজর রাখছি। বিমানবন্দর ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে আমরা সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখলে তা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আহ্বান জানাই।”
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, বিমানবন্দর ব্যবহার করে স্বর্ণ চোরাচালান মূলত আন্তর্জাতিক যাত্রীদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ইমেজকে প্রভাবিত করে। বর্তমানে বিমানবন্দর নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের চোরাচালান রোধে অভিযান আরও তীক্ষ্ণ হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে দেখা যায়, বিমানবন্দর অঞ্চলে কড়া নজরদারী থাকা সত্ত্বেও চোরাচালান সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়। এ কারণেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বিত কার্যক্রমের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।
বাংলাবার্তা/এসজে