ছবি: সংগৃহীত
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সাম্প্রতিক মন্তব্য ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত। আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “আমি ওই বক্তব্যকে ভারতের বিষয় হিসেবে দেখছি না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যে ধরনের মন্তব্য হয়েছে, তা একেবারেই অযৌক্তিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।”
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তবে ভারত বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে যে কোনো ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে। এ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিদেশি কোনো হস্তক্ষেপ এখানে গ্রহণযোগ্য নয়।”
ব্রিফিংয়ের সময় তিনি রাষ্ট্রপতির পাঠানো একটি চিঠি, তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা এবং ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সহ সমসাময়িক বিষয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। রাষ্ট্রপতির পাঠানো চিঠি সম্পর্কে তৌহিদ বলেন, “আমি চিঠিটি পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। এটি শুধু রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের অনেক পরে চিঠি আমার হাতে এসেছে।”
এছাড়া, বিদেশি মিশনগুলোতে রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণ সংক্রান্ত কোনো সরকারি নির্দেশনা বা আইন নেই—এমন দাবিকেও তিনি অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে, আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রীর বাসায় তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনো ব্যক্তির বাসায় কূটনীতিকদের যাওয়া কোনো অপরাধ নয়। তবে আলোচ্য বিষয় ও সম্ভাব্য ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।”
তুরস্কের সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে তৌহিদ বলেন, “এটি দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের অংশ। তুরস্কের সামরিক প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য। আমাদের ইতোমধ্যে অনেক দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে এবং তা সম্প্রসারণ করা স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয়।”
পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার প্রসঙ্গেও তিনি সতর্ক করে বলেন, “এ ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন এবং বাংলাদেশ কোনো সংঘাতে অংশ নিচ্ছে না। আমরা চাই না আমাদের নাগরিক বিদেশি কোনো অভিযানে জড়াক।”
ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েও তিনি বিস্তারিত জানান। কিছু দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। কিন্তু বছরে মাত্র ২ হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। বাংলাদেশ জার্মান সরকারের কাছে শিক্ষার্থী কোটার সংখ্যা অন্তত ৯ হাজারে উন্নীত করার অনুরোধ করেছে, যা পাকিস্তানের সমান।”
তিনি আরও জানান, সরকার বিকল্প দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার চেষ্টা করছে, যাতে প্রক্রিয়াজট ও সেবা সংকট নিরসন করা যায়। তবে তৌহিদ স্বীকার করেছেন, জাল নথি ও অনিয়মিত অভিবাসনের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “এ ধরনের অনিয়ম প্রকৃত আবেদনকারীরাও সমস্যায় ফেলে। আমাদের প্রথমেই নিজেদের অভ্যন্তরীণ ত্রুটি সমাধান করতে হবে।”
উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বায়ত্তশাসন রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং বিদেশি হস্তক্ষেপকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে তিনি দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, শিক্ষাবিষয়ক সুযোগ ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



