ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ড. শহিদুল আলমকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী বুধবার (৮ অক্টোবর) ভোরে ফিলিস্তিন উপকূলের নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে আটক করেছে। তিনি তখন Freedom Flotilla Coalition-এর মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজ “Conscience” (কনশানস)-এ অবস্থান করছিলেন। এই জাহাজে শহিদুল আলম ছাড়াও ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও ক্রু সদস্যরা।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় সময় সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে ইসরাইলি নৌবাহিনী হঠাৎ জাহাজটি ঘিরে ফেলে। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার মধ্যেই তারা জাহাজে ওঠে এবং সেখানে থাকা সবাইকে জোরপূর্বক আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী জাহাজের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যাতে বাইরের কেউ সরাসরি সংযোগ করতে না পারে।
আটকের কিছুক্ষণ আগে ড. শহিদুল আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি জরুরি বার্তা পোস্ট করা হয়। বার্তায় বলা হয়— “আজ (৮ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি সময় সকাল আনুমানিক ৬টায় Freedom Flotilla Conscience জাহাজের সব সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ক্রু সদস্যসহ আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম ইসরাইলি দখলদার বাহিনী দ্বারা অপহৃত হন। শহিদুল আলম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার ফেসবুক পেজটি ‘Bangladesh Stands With Palestine’ এবং ‘Free Shahidul’ অ্যাক্টিভিস্টরা পরিচালনা করবেন।”
এই বার্তা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক ও বিবেকবান মানুষজন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টুইটার (এক্স), ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ।
বিশ্বজুড়ে তিনটি হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে শুরু করে— #FreeShahidulAlam, #FreeTheFlotilla, এবং #FreedomForGazaCrew।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পী ও মানবাধিকার কর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠন “শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দাও” শিরোনামে অনলাইন মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে।
শহিদুল আলমের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ঘোষণায় জানানো হয়েছে, তার ফেসবুক পেজের দায়িত্ব এখন থেকে দুটি স্বাধীন অধিকারভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের হাতে থাকবে—
১. Bangladesh Stands With Palestine
২. Free Shahidul
এই দুটি সংগঠন মূলত মানবিক সহায়তা, দখলবিরোধী সচেতনতা ও তথ্যপ্রচারে সক্রিয়। তারা জানিয়েছে, শহিদুল আলমের পেজে এখন থেকে কেবল যাচাইকৃত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করা হবে—যেখানে উল্লেখ থাকবে তার অবস্থান, নিরাপত্তা, এবং মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত পদক্ষেপের খবর।
তারা আরও জানিয়েছে, “যেকোনো গুজব বা যাচাইবিহীন তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকুন। আমরা কেবল নিশ্চিত সূত্র থেকে পাওয়া আপডেটই প্রকাশ করব।”
Freedom Flotilla Coalition হলো একটি আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য—গাজার উপর ইসরাইলের অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। এই মিশনে অংশ নেওয়া Conscience জাহাজটি ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্যদ্রব্য ও শিশুখাদ্য বহন করছিল।
এই জাহাজে থাকা যাত্রীরা কেউই সশস্ত্র ছিলেন না। তারা কেবল মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী সেই জাহাজটিকে “অবৈধ অনুপ্রবেশ” বলে দাবি করে জোরপূর্বক আটক করে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফ্লোটিলা সংগঠনের মুখপাত্র হেনরিয়েটা রিড বলেন— “ইসরাইলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন, মানবিক নীতি ও মৌলিক মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মীদের বিরুদ্ধে দস্যুবৃত্তি চালিয়েছে।”
ইউরোপীয় মানবাধিকার সংগঠন Front Line Defenders, Amnesty International, এবং Reporters Without Borders শহিদুল আলমসহ আটক সকল সাংবাদিক ও কর্মীদের তাৎক্ষণিক মুক্তির দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, তারা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “শহিদুল আলম কেবল একজন আলোকচিত্রী নন, তিনি মানবিক বিবেকের কণ্ঠস্বর। আমরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেব।”
শহিদুল আলমের আটক হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লন্ডন, নিউইয়র্ক, টরন্টো, কায়রো, কেপ টাউন ও কুয়ালালামপুরে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং ফিলিস্তিন সমর্থক সংগঠনগুলো তাৎক্ষণিক সমাবেশ করে।
লন্ডনের Trafalgar Square-এ অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন— “শহিদুল আলম সত্য ও বিবেকের কণ্ঠস্বর। তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে ইসরাইল মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”
ড. শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী, যিনি Pathshala South Asian Media Institute এবং Drik Picture Library-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে ছবি তুলে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছেন।
তার কাজের জন্য তিনি Lucie Award, Shilpakala Academy Award, এবং Time Magazine’s Person of the Year (2021) তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। মানবতার পক্ষে তার নির্ভীক অবস্থানের কারণেই অনেকে তাকে “ক্যামেরার যোদ্ধা” বলে অভিহিত করেন।
বর্তমানে শহিদুল আলম ও তার সহযাত্রীদের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, তার পেজ ও সংযুক্ত প্ল্যাটফর্মগুলোই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আপনি যদি শহিদুল আলমের মুক্তি ও অবস্থান সম্পর্কে সর্বশেষ খবর জানতে চান, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন—
১️⃣ ড. শহিদুল আলমের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow এবং See First অপশন চালু করুন।
২️⃣ ‘Bangladesh Stands With Palestine’ এবং ‘Free Shahidul’ পেজ দুটিতে Notification Alert অন করুন।
৩️⃣ আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা Freedom Flotilla Coalition-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও X (Twitter) অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করুন।
৪️⃣ যাচাইকৃত সংবাদমাধ্যম যেমন Al Jazeera, The Guardian, এবং Middle East Eye-এর সংবাদ অনুসরণ করুন।
৫️⃣ গুজব বা অপ্রমাণিত পোস্ট শেয়ার না করে নিশ্চিত তথ্য প্রচারে সহায়তা করুন।
শহিদুল আলমের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, “তিনি যে মিশনে গিয়েছিলেন তা মানবতার। তাকে আটক করে মানবতার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা যাবে না।”
এখন বিশ্বের হাজারো চোখ তাকিয়ে আছে—ইসরাইলি আটকযন্ত্রের অন্ধকার কারাগার থেকে কখন বেরিয়ে আসবেন বাংলাদেশের এই আলোকযোদ্ধা, যিনি সারা জীবনে ক্যামেরার লেন্স দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আলো জ্বালিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



