
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসনসীমা পুনর্নির্ধারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চারদিনব্যাপী শুনানি আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই সময়ে সারাদেশ থেকে জমা পড়া এক হাজার ৭৬০টি দাবি ও আপত্তি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর এসব শুনানি ও পর্যালোচনার ভিত্তিতেই কমিশন চূড়ান্তভাবে আসনসীমার তালিকা প্রকাশ করবে।
ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম দিন অর্থাৎ ২৪ আগস্ট রবিবার কুমিল্লা অঞ্চলের ১৮টি আসনের বিপরীতে জমা পড়া ৬৮৩টি আবেদন শুনানি করা হবে। কুমিল্লা অঞ্চল থেকেই সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। পরদিন সোমবার (২৫ আগস্ট) তিনটি অঞ্চলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা অঞ্চলের ৯৮টি, বরিশাল অঞ্চলের ৩৮১টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টি দাবি-আপত্তি শোনা হবে ওইদিন।
তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) হবে ঢাকা অঞ্চলের শুনানি। এই অঞ্চলে মোট ৩১৬টি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ঢাকার একক আসনগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা রয়েছে। সবশেষ দিনে, বুধবার (২৭ আগস্ট), একসঙ্গে চারটি অঞ্চলের শুনানি হবে। এর মধ্যে রয়েছে রংপুর অঞ্চলের মাত্র ৭টি আবেদন, রাজশাহী অঞ্চলের ২৩২টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৩টি, ফরিদপুর অঞ্চলের ১৮টি এবং সিলেট অঞ্চলের ২টি আবেদন।
মোট ৮৩টি আসনের সীমানা পরিবর্তনকে ঘিরে এসেছে এক হাজার ৭৬০টি আবেদন। এর মধ্যে সর্বাধিক ৬৮৩টি আবেদন এসেছে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে, যা এককভাবে মোট দাবির প্রায় অর্ধেকের সমান। একক আসনের মধ্যে কুমিল্লা-১ সবচেয়ে আলোচিত, যেখানে একাই ৩৬২টি আপত্তি জমা পড়েছে।
পিরোজপুর জেলায় তিনটি আসন—পিরোজপুর-১, ২ ও ৩ থেকে মোট ২৮৭টি আবেদন জমা পড়ে। সিরাজগঞ্জ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-৬ মিলে জমা পড়েছে ২২০টি আবেদন। ঢাকার মধ্যেও আপত্তি এসেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে ঢাকা-১ আসনে সবচেয়ে বেশি, মোট ৭৯টি আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে ভোটার সংখ্যার ভারসাম্য আনার যুক্তিতে গাজীপুর জেলায় একটি নতুন আসন যুক্ত করা হয়। এর ফলে গাজীপুরে আসনের সংখ্যা পাঁচ থেকে বেড়ে ছয়টিতে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বাগেরহাট জেলার আসন চার থেকে কমিয়ে তিনটিতে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এ ছাড়া আরও ৩৯টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে—
-
উত্তরাঞ্চল: পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২।
-
দক্ষিণাঞ্চল: সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরীয়তপুর-২ ও ৩, বাগেরহাট-২ ও ৩।
-
ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী জেলা: ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫।
-
সিলেট বিভাগ: সিলেট-১ ও ৩।
-
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চল: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮।
আপত্তি গ্রহণ ও শুনানি প্রক্রিয়া
খসড়া প্রকাশের পর ইসি ১০ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি জানাতে সময় দেয়। সেই সময়সীমার মধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, ভোটার ও সংশ্লিষ্ট নাগরিকেরা মোট এক হাজার ৭৬০টি আবেদন জমা দেন। এখন শুনানির মাধ্যমে সেসব যাচাই-বাছাই করে কমিশন চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসউদ জানিয়েছেন, “আগামী রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে আমরা শুনানি শুরু করব, যা চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিটি আবেদন গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে। এরপর পর্যালোচনা শেষে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরও বলেন, দাবি-আপত্তির ভিত্তিতে সীমারেখা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কমিশন ভোটার সংখ্যার সমতা, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক একক—এসব বিষয় বিবেচনা করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে আসনসীমা পুনর্নির্ধারণ একটি সংবেদনশীল বিষয়। যেকোনো প্রকার অসন্তোষ বা বিতর্ক নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই কমিশনের উচিত হবে স্বচ্ছভাবে শুনানি পরিচালনা করা এবং লিখিত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা, যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
তাদের মতে, কুমিল্লা, পিরোজপুর, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা অঞ্চলের আসনগুলোকে ঘিরেই সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হতে পারে। কারণ এসব আসনে ব্যাপক হারে আবেদন জমা পড়েছে, যা স্থানীয় রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
শুনানি শেষে ইসি দ্রুততম সময়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই তালিকা প্রকাশের পর আর কোনো দাবি-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। ফলে নির্বাচনী রাজনীতির জন্য এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ