
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিসরে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তে প্রশাসনিক ব্যাখ্যা যাই থাকুক না কেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল, সমালোচনা ও প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিকৃতি সরকারি দপ্তর ও বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলোর জন্য অনেক বছর ধরে একটি প্রথাগত প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সূত্র জানাচ্ছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে দেওয়া নির্দেশনার আলোকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলার বার্তা দেয়। এর কোনো লিখিত নির্দেশনা জারি হয়নি। ফলে অনেক দূতাবাস কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। এর ফলে সমন্বয়হীনতা ও অস্পষ্টতা প্রকট আকার ধারণ করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনেক আগেই এ ধরনের নির্দেশনা মৌখিকভাবে দেওয়া হয়েছিল। তবে তা কার্যকর করতে এত দেরি হলো কেন—এ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় ওই কর্মকর্তা কেবল বলেন, “এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করাই ভালো।”
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই দপ্তরে পোট্রেট সংস্কৃতি নিরুৎসাহিত করছে এবং অলিখিতভাবে ‘জিরো পোট্রেট নীতি’ অনুসরণ করছে। তবে লিখিতভাবে কোনো সময় রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক উত্তাপ কমতে শুরু করায় এখন ছোট ছোট বিষয়কেও বড় করে তোলা হচ্ছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নামও এ বিতর্কে উঠে এসেছে। সূত্র বলছে, সুইজারল্যান্ড সফরে গিয়ে তিনি জেনেভায় বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রপতির ছবি টানানো দেখতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। দেশে ফিরে এ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। এরপরই বিদেশি মিশনে মৌখিক নির্দেশনা পৌঁছায়। তবে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ খবর অস্বীকার করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে জীবিত রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরকারি দপ্তরে টানানোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কেবল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি স্থাপন সংবিধানে উল্লেখ আছে। তবে প্রশাসনিকভাবে ২০০২ সালে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো হয়। সে ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সরকারগুলোও একই নিয়ম মেনে এসেছে। ফলে হঠাৎ করে কোনো প্রজ্ঞাপন ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রপতির ছবিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই বিতর্ক মূলত প্রশাসনিক স্পষ্টতার অভাবের ফল। লিখিত নির্দেশনা থাকলে এই ধরনের বিভ্রান্তি ও গুজব এড়ানো যেত। তাদের মতে, সরকারকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে, নইলে নির্বাচনের প্রাক্কালে এটি অযথা বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ