
ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী’র সাবেক আমির সিরাজ-উল-হক। এক ভিডিও বার্তায় তিনি ভারতকে দায়ী করে বলেছেন—যুদ্ধ শুরু করেছে ভারত, কিন্তু সেটার শেষ করবে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া শুধু একটি দেশের আত্মরক্ষার অধিকার নয়, বরং এটি আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নেও এক অনড় অবস্থান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বার্তায় সিরাজ-উল-হক বলেন, “কাশ্মীর সীমান্তে ভারত যেভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে, তা শুধু বেআইনি নয় বরং কাপুরুষোচিত। তবে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত, যথার্থ ও সাহসিকতার সঙ্গে যে জবাব দিয়েছে, তাতে গোটা জাতি গর্বিত।”
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের জনগণ ও সেনাবাহিনী আজ একত্রিত, ঐক্যবদ্ধ এবং সচেতন। কেউ যেন একে দুর্বল ভেবে ভুল না করে।”
ভারতের সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজ-উল-হক বলেন, “ভারত এই সংঘাতের সূচনা করলেও এর পরিণতি কী হবে, সেটা এখন পাকিস্তান নির্ধারণ করবে। আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু যদি তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে এর শেষও আমরা করব—আমাদের শর্তে এবং আমাদের মাটিতে।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভারতের নেতৃত্বকে বুঝতে হবে, তারা যে আগুন জ্বালিয়েছে, তাতে নিজেরাই পুড়ে মরবে। পাকিস্তান কেবল প্রতিরোধ নয়, প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক অবস্থানে যেতে সক্ষম।”
পাকিস্তানের সাবেক এই ইসলামী নেতা আরও বলেন, “এখন রাজনীতি নয়, দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। সকল মত ও দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়াতে হবে। ভারত যতই উস্কানি দিক না কেন, পাকিস্তানের জবাব হবে দৃঢ় এবং প্রতিরোধমূলক।”
তিনি ভারতকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা কাশ্মীরকে দমন করতে চেয়েছেন, এখন তার খেসারত দিতে হবে। আমরা কাশ্মীরিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব।”
বিশ্লেষকদের মতে, সিরাজ-উল-হকের এই বক্তব্য শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থনের বার্তা নয়, বরং একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আবেগকেও উসকে দিচ্ছে, যা যুদ্ধাবস্থায় জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জামায়াতে ইসলামী, দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীর ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। এই বক্তব্য তাদের পুনরায় সক্রিয় অবস্থানে ফেরার ইঙ্গিতও হতে পারে।
এই বিবৃতি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে ৮ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, এমনকি পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথাও বলেছে তারা। যদিও ভারত এসব দাবি অস্বীকার করেছে।
সিরাজ-উল-হকের মন্তব্য দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার একটি প্রতিফলন। কূটনৈতিক মহল বলছে, এমন সময় দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংযত ভাষার প্রয়োজন ছিল, তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক-ধর্মীয় নেতৃত্ব এখন জাতীয়তাবাদী সুরকে সামনে আনছে, যা সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এই যুদ্ধকৌশল শুধু অস্ত্রের নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও আদর্শিক লড়াইও বটে—যেখানে এক একটি বক্তব্য হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের কৌশলের দিকনির্দেশনা।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
বাংলাবার্তা/এমএইচ