ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি ফ্যাশন ব্র্যান্ড টপ টেনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার করফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির রাজধানী এবং কুমিল্লায় অবস্থিত ছয়টি শো-রুমের হিসাব নিরীক্ষার পর দেখা গেছে, টপ টেন মোট ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২,৭৮৭ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। এনবিআরের নথি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরীক্ষা অনুযায়ী, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও কুমিল্লার শো-রুমগুলোতে বিক্রির তথ্য এবং আয়ের প্রকৃত হিসাবকে গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। বিশেষ করে ফেব্রিক্স বিক্রি, টেইলারিং ফি, উৎসে মূসক এবং স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উপর কর ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিউমার্কেট থানার ড. কুদরত-ই-খোদা রোডে অবস্থিত টপ টেন ফ্যাশন লিমিটেড ৩০ লাখ ৭৬,৬৮৮ টাকার কর ফাঁকি করেছে। একই এলাকার টপ টেন মার্ট লিমিটেড ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭২,৩৮৪ টাকা এবং টপ টেন ফেব্রিক্স এন্ড টেইলার্স লিমিটেড ২১ কোটি ৫৪ লাখ ১৩,২০০ টাকার করফাঁকির মামলায় এনবিআর চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে।
ধানমন্ডির টপ টেন মার্ট লিমিটেড ৬৫ লাখ ৮৫,৮১৪ টাকার করফাঁকিতে অভিযুক্ত; এ শাখার কর আদায়ের জন্য এনবিআর একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কুমিল্লার দুটি শো-রুমে যথাক্রমে ১০ লাখ ৪৮,৭৮৮ টাকা এবং ৯ কোটি ১৬ লাখ ৬৫,৯১৩ টাকার করফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ছয়টি মামলায় মোট করফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬২,৭৮৭ টাকা।
এনবিআরের তিনটি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এই মামলার নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। একটি মামলা ঢাকা কমিশনারেট দক্ষিণ এবং বাকি দুইটি ধানমন্ডি ও কুমিল্লার সংশ্লিষ্ট বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিরীক্ষা করা হয়েছে। নিরীক্ষায় শুধু জরিমানা ও সুদ ব্যতীত মোট ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার করফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
চূড়ান্ত নোটিশ দেয়ার পরও টপ টেন মাত্র ৩০ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮৮ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি টাকা দিতে প্রতিষ্ঠানটি বারবার নোটিশ সত্ত্বেও অবহেলা করছে। এনবিআরের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, টপ টেনের মোট কর দায় ৭০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।
টপ টেনের একটি শো-রুমের বাণিজ্যিক দলিলাদি অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ফেব্রিক্স বিক্রয় থেকে তারা মোট ৪৮ কোটি ৩৭ হাজার ২৪,৭৪৪ টাকা এবং টেইলারিং ফি থেকে ১৬ কোটি ১২ লাখ ৪১,৫৮১ টাকা আয় করেছে। তবে ভ্যাট দাখিলপত্রে তারা ফেব্রিক্স বিক্রি মাত্র ৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৮,৩৬৫ টাকা এবং টেইলারিং ফি ১ কোটি ৫১ লাখ ৩১,৬৬৪ টাকা দেখিয়েছে। অর্থাৎ, ফেব্রিক্স বিক্রির ৩৯ কোটি ৪ লাখ ৬,৩৭৯ টাকা এবং টেইলারিং ফি ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৯,৯১৭ টাকা আয় অদেখা বা কম দেখানো হয়েছে।
এই কম প্রদর্শিত টাকার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট যথাক্রমে ২ কোটি ৭২ লাখ ৩৭,৬৫৪ টাকা এবং ১ কোটি ৩২ লাখ ৮২,৭২০ টাকা, মোট ৪ কোটি ৫ লাখ ২০,৩৭৪ টাকা। একই অর্থবছরে উৎসে মূসক বাবদ ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১২,৩৭৪ টাকা এবং ভাড়ার উপর প্রযোজ্য মূসক বাবদ ৮৭ লাখ ৩০,৪৫৩ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে। পরবর্তীতে এই অর্থ পরিশোধের জন্য টপ টেন কর্তৃপক্ষ কোনো দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেনি।
ঢাকা কমিশনারেট দক্ষিণের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "টপ টেনের কয়েকটি মামলা রয়েছে। কর পরিশোধে দেরি হওয়ায় আইন অনুযায়ী জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠানটির মোট করদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।"
টপ টেনের এজিএম মো. মাহবুব করফাঁকি ও পরিশোধ বিষয়ে বলেন, "আপনি যেখান থেকে জেনেছেন, সেখানে যাচাই করে দেখুন। টপ টেন যেটা ভালো মনে করবে, তারই সিদ্ধান্ত নেবে।"
প্রতিষ্ঠানটির অবহেলা এবং করফাঁকির এই মামলাগুলো দেশের করদাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কর ফাঁকি প্রতিরোধে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এনবিআরের পদক্ষেপ আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



