ছবি: সংগৃহীত
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ২১ বছর, এক মামলায় জয় ও পুতুলের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার তিন লাখ এবং জয় ও পুতুলের এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), রাজউকের সাবেক সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, সাবেক উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান, সাবেক সহকারী পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তাদের মধ্যে দুই মামলায় সালাহ উদ্দিনের ১২ বছর ও দুই লাখ টাকা জরিমানা, তিন মামলায় শরীফ, শাহিদ এবং ওয়াসীর ১৮ বছর কারাদণ্ড ও তিন লাখ জরিমানা, আনিসুরের তিন মামলায় ১৫ বছর ও তিন লাখ জরিমানা, তিন মামলায় নাসির ও সামসুদ্দিনের নয় বছর ও ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, পুরবী গোলদারের তিন মামলায় তিন বছর ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, দুই মামলায় তন্ময় ও নুরুলের ছয় বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, এক মামলায় কবির, শাহিনুল ও কামরুলের তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, এক মামলায় হাফিজুর, হাবিবুর ও মাজহারুলের এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, তিন মামলায় খুরশীদের তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন এই মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুদকের আইনজীবীরাও। পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারসহ ৪৭ জনকে আসামি করা হয়।
গত ১৭ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে এক আসামি খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি। পরে গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন।
মামলাটি তদন্ত শেষে একই বছরের ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। পরে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তাঁরা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসত্ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়। এর আগে গত বছর ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশের এলাকায় শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০০৯) বরাদ্দ পেয়েছেন।
২০২২ সালের ৩ আগস্ট তাঁর নামে রাজউক প্লটের বরাদ্দপত্র দেয়। সজীব ওয়াজেদ জয় (প্লট নম্বর ০১৫) এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও (প্লট নম্বর ০১৭) ১০ কাঠা করে প্লট পেয়েছেন। জয়ের বরাদ্দপত্র ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়া হয় এবং ১০ নভেম্বর মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। পুতুলের বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ওই বছরের ২ নভেম্বর। শেখ রেহানাও ১০ কাঠার প্লট (প্লট নম্বর ০১৩) বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১১) এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের (প্লট নম্বর ০১৯) নামেও একই পরিমাণের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরে চলতি বছরের ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



