
ছবি: সংগৃহীত
দেশ-বিদেশে অবস্থানরত করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ঝামেলামুক্ত করতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারই অংশ হিসেবে এবার বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ই-রিটার্ন দাখিল আরও সহজ করা হয়েছে। এখন থেকে প্রবাসী করদাতারা তাদের নিজস্ব ই-মেইলের মাধ্যমে ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) গ্রহণ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
এনবিআর বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এত দিন পর্যন্ত ই-রিটার্ন পোর্টালে নিবন্ধনের সময় করদাতাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত বাংলাদেশের মোবাইল নম্বরে ওটিপি পাঠানো হতো। কিন্তু বিদেশে থাকা প্রবাসীদের অনেকেরই দেশে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর সক্রিয় না থাকায় তারা ই-রিটার্ন দাখিলে নানা জটিলতায় পড়ছিলেন। এই সমস্যা দূর করতে এখন থেকে প্রবাসীরা মোবাইলের পরিবর্তে ই-মেইলের মাধ্যমেই ওটিপি পেতে পারবেন।
এ বিষয়ে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন শেখ বলেন, “আমরা প্রবাসীদের জন্য ই-রিটার্ন ব্যবস্থাকে আরও সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগে দেশে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ছাড়া ওটিপি পাওয়া সম্ভব ছিল না, ফলে অনেক প্রবাসী করদাতা রিটার্ন জমা দিতে পারছিলেন না। এখন তারা ই-মেইলে ওটিপি পেয়ে সহজেই রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, “এই পরিবর্তনের ফলে বিদেশে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশি যারা নিয়মিতভাবে দেশে আয়কর পরিশোধ করে আসছেন, তারা আর মোবাইল সংযোগ নিয়ে চিন্তিত হবেন না। নতুন পদ্ধতিতে তারা যেকোনো স্থান থেকে নিরাপদে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।”
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে অবস্থানরত করদাতারা এখন তাদের পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ভিসা-সিলের কপি, ই-মেইল ঠিকানা এবং সাম্প্রতিক তোলা ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংযুক্ত করে ই-মেইল করতে পারবেন [email protected] ঠিকানায়। আবেদন যাচাইয়ের পর এনবিআর তাদের ই-মেইলে ওটিপি এবং রেজিস্ট্রেশন লিংক পাঠাবে। এর মাধ্যমে প্রবাসী করদাতারা সরাসরি ই-রিটার্ন পোর্টালে নিবন্ধন করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
প্রবাসীদের জন্য এই নতুন সুবিধা এনবিআরের চলমান ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কর্মসূচির অংশ। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, অনলাইন রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ কাগজবিহীন, নিরাপদ ও সময়সাশ্রয়ী। করদাতারা সফলভাবে রিটার্ন জমা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে acknowledgment slip ও আয়কর সনদ প্রিন্ট করতে পারবেন, যা আগের কাগজভিত্তিক প্রক্রিয়ার চেয়ে অনেক দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য।
২০২৫-২৬ করবর্ষে এখন পর্যন্ত অনলাইনে ৮ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এনবিআর আশা করছে, প্রবাসীদের জন্য ই-মেইলভিত্তিক ওটিপি চালুর ফলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
এই করবর্ষে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অক্ষম বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি এবং দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া অন্যান্য সব করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এনবিআর বলছে, বাধ্যতামূলক ই-রিটার্নের ফলে কর দাখিলের সংস্কৃতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং করদাতাদের সুবিধা অনেক বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, ই-রিটার্ন সিস্টেমে বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় সহায়তা নিতে পারেন। এর পাশাপাশি অনলাইনে “লাইভ চ্যাট সাপোর্ট” সুবিধাও চালু করা হয়েছে, যাতে রিটার্ন দাখিলের সময় কোনো সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান পাওয়া যায়।
করদাতাদের সুবিধার্থে এনবিআর ইতিমধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে এই নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করেছে। দূতাবাসগুলো এখন প্রবাসীদের করসংক্রান্ত সহায়তায় পরামর্শ প্রদান ও প্রচারণা চালাবে, যাতে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দেশের রাজস্ব আহরণে প্রবাসী করদাতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অনেক প্রবাসী দেশে সম্পত্তি, ব্যবসা বা বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় করেন। তাদের জন্য সহজ, আধুনিক ও অনলাইনভিত্তিক কর দাখিল ব্যবস্থা চালু হওয়ায় রাজস্ব ব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব করদাতাকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আয়কর রিটার্ন দাখিলের আহ্বান জানিয়েছে। বোর্ডের ভাষায়, “দেশে বা বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন, এখন রিটার্ন দাখিলের কাজ হবে মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে।”
বাংলাবার্তা/এসজে