
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিলাসবহুল ২৫টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সরকারি অর্থে বিলাসবহুল এই যানবাহন সংগ্রহের প্রস্তাব পাঠানো হয় সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির কাছে। তবে দেশের বিদ্যমান আর্থিক বাস্তবতা, বাজেট ঘাটতি ও খরচ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২০ মে) রাজধানীর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে উপদেষ্টা, মন্ত্রী কিংবা মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার জন্য সরকারের নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়। কিন্তু কমিটির সদস্যরা এই ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অপচয় হিসেবে চিহ্নিত করে প্রস্তাবটি নাকচ করে দেন।
ওই বৈঠকে মোট তিনটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথা থাকলেও উপস্থাপন করা হয় মাত্র দুটি। তার মধ্যে একটি প্রস্তাবে সম্মতি দেয় উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। আর গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অপর একটি প্রস্তাব এদিন সভায় উপস্থাপনই করা হয়নি।
এই সিদ্ধান্ত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের মতে, একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যার কাজ মূলত নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা, তাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাবই প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের ট্যাক্সের অর্থ দিয়ে এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব, সরকারের সঙ্গে জনসাধারণের দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি কঠিন অর্থনৈতিক সময় অতিক্রম করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকুচিত, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য বিঘ্নিত, সরকারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় সরকারি ব্যয়ে সংযম ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খরচ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ব্যয় সংযমী সিদ্ধান্ত কেবল সরকারের সদিচ্ছারই প্রতিফলন নয়, বরং তা একটি অর্থনৈতিক বার্তা—যে সরকার নিজে কৃচ্ছ্র সাধন শুরু করেছে। এতে করে ভবিষ্যৎ বাজেটে কঠোর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অপ্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ কমানোর সুর স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সরকারের এমন পদক্ষেপ জনসাধারণের কাছে ইতিবাচক প্রতিফলন ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতি, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ও চাকরির অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছে, সেখানে মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনা জনআক্রোশ সৃষ্টি করতে পারত। এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্ততপক্ষে একটি বার্তা গেছে—সরকার নিজ খরচে সংযমী থাকার চেষ্টা করছে।
সার্বিকভাবে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং নির্বাচনের পূর্বাবস্থায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নিরপেক্ষ, সংবেদনশীল ও জনবান্ধব হিসেবে তুলে ধরতে এমন পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দিলেও, তা ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। ব্যয় সংকোচন, অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলছেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ