
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানী ঢাকায় সর্বসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার (১৭ মে) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর স্বাক্ষর করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোববার (১৮ মে) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
ডিএমপির জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে এমন এক সময় এই নির্দেশনা এলো যখন রাজধানীজুড়ে নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সম্ভাব্য কর্মসূচির আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছিল।
ডিএমপি কর্তৃক ঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
কচুক্ষেত সড়ক এলাকা,
বিজয় সরণি থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হয়ে শহিদ জাহাংগীর গেট সংলগ্ন অঞ্চল,
বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকা,
সৈনিক ক্লাব মোড়,
ভাষানটেক,
মাটিকাটা এলাকা, এবং
ইসিবি চত্বর ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
এইসব এলাকায় ডিএমপি অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তির পক্ষে সেখানে কোনো ধরনের জমায়েত, সভা-সমাবেশ, মিছিল কিংবা শোভাযাত্রা করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সতর্ক করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূলত জনশৃঙ্খলা রক্ষার যুক্তিই তুলে ধরা হয়েছে। ডিএমপি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ও প্রস্তুতি দেখা গেছে, যার ফলে জনজীবনে বিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে বিজয় সরণি ও কচুক্ষেত এলাকা আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও সরকারি স্থাপনা থাকায় সেখানে যেকোনো ধরনের জনসমাগমকে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ভাষানটেক, ইসিবি চত্বর ও মাটিকাটা এলাকাগুলিও সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সামরিক বাহিনীর ঘাঁটির নিকটবর্তী হওয়ায় এসব জায়গায় বাড়তি সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই নির্দেশনার পাশাপাশি একই দিন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকেও একটি আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যাতে এসব এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কথা জানানো হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর এমন স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মসূচি বা জনসমাগম বহুদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে, বিশেষ করে যখন জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কোনো আশঙ্কা দেখা দেয়। সেনাবাহিনীর স্থাপনা ঘেঁষে জনসভা বা বিক্ষোভ কর্মসূচি অতীতে কোনো কোনো সময় সংঘর্ষ বা অনভিপ্রেত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। তাই, আগাম প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ডিএমপির এই সিদ্ধান্তকে ‘যৌক্তিক’ বলেই মনে করছেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় বা কর্মসূচি পালন করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারা অনুযায়ী, জনগণের চলাচল বা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে পুলিশের কমিশনার নির্দিষ্ট এলাকা বা সময়ের জন্য জনসমাগম নিষিদ্ধ করতে পারেন। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর। অতীতেও এমন নিষেধাজ্ঞা জারির নজির রয়েছে, তবে সেটি ছিল সাধারণত অস্থায়ী। এবার ডিএমপি বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বহাল থাকবে, যা অনির্দিষ্টকালের ইঙ্গিত দেয়।
রাজধানীর নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, তারা যেন এসব এলাকায় অপ্রয়োজনে ভিড় না করেন এবং কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ না নেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৪ ঘণ্টা এসব এলাকায় নজরদারি চালাবে এবং সন্দেহজনক বা নিষিদ্ধ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামগ্রিকভাবে, রাজধানীর জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপির এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোলা রাখা জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ