
ছবি: সংগৃহীত
জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই দেশের ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে স্বস্তিদায়ক বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার প্রবাহ। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পর ঘন মেঘে ঢাকা আকাশ এবং বৃষ্টির পরশ যেন সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছে জনজীবনে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগ ও জেলায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। কোথাও কোথাও হতে পারে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও দমকা হাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
১৫ মে: ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় সংশ্লিষ্ট নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি বিকেলের দিকেই বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
৫ দিনব্যাপী সম্ভাব্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৫ মে থেকে শুরু করে পরবর্তী পাঁচ দিন—অর্থাৎ ২০ মে পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
শুক্রবার (১৬ মে)
রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’একটি স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বর্ষণ হতে পারে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে। পাশাপাশি এই দিন দেশের কিছু অঞ্চলে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
শনিবার (১৭ মে)
আবহাওয়ার গতিপথ অনেকটা একই রকম থাকবে। রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের পাশাপাশি রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায়ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
রোববার (১৮ মে)
দুপুরের পর আবারো দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারি বর্ষণের প্রবণতা বজায় থাকবে। দেশের অন্য অংশে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তাপমাত্রায় বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
সোমবার (১৯ মে)
এদিনেও রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ কিছু জেলায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। ভারি বর্ষণ হতে পারে রংপুর অঞ্চলজুড়ে। এই সময় দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে)
৫ দিনের পূর্বাভাসের শেষ দিনেও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্য বিভাগগুলোতেও কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাপমাত্রা সার্বিকভাবে অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার চিত্র
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর রাজারহাটে, যেখানে ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে রয়েছে—নেত্রকোণা ৯২ মিমি, সিলেট ৮৯ মিমি, কুমিল্লা ৫৪ মিমি, রংপুর ৪৪ মিমি, তেঁতুলিয়া ৩৫ মিমি, ডিমলা ৩৪ মিমি এবং ঢাকায় ২৩ মিলিমিটার।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও চাঁদপুরসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগে তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। তবে আসন্ন বৃষ্টিপাতের ফলে এই তাপপ্রবাহ অনেকাংশে প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আসন্ন পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টির ফলে কিছু কিছু অঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে নগরাঞ্চলে। অন্যদিকে, কৃষিক্ষেত্রে এ বৃষ্টিপাত উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পরিশেষে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের এই বৃষ্টিপাত দেশের দীর্ঘস্থায়ী গরম আবহাওয়াকে খানিকটা প্রশমিত করলেও এর সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সকলকে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎচমকানো আবহাওয়ায় খোলা জায়গা, কৃষিক্ষেত্র ও নদী অঞ্চলে না যাওয়ার জন্যও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ