
ছবি: সংগৃহীত
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার অংশ হিসেবে "জাতীয় ঐকমত্য কমিশন" নানা রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সর্বজনগ্রাহ্য রাজনৈতিক সনদ তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (৬ মে) জাতীয় সংসদ ভবনের লেডিস ডিপ্লোম্যাটিক (এলডি) হলে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা বৈঠক। এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুসংহত রাজনৈতিক সনদ তৈরির পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই এ সনদের রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।"
তিনি জানান, "জাতীয় নাগরিক পার্টি যে মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে, তা কমিশন ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে। এখন সেগুলো নিয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা হবে। আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে এই প্রস্তাবনাগুলোর প্রতিফলন স্পষ্টভাবে থাকবে।” তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এমন একটি রাজনৈতিক সনদ তৈরি করা যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক মানদণ্ডকে প্রতিষ্ঠিত করবে।"
বৈঠকের প্রারম্ভে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন দলের পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের একটি লিখিত প্রস্তাব কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
আখতার হোসেন বলেন, “বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী উপাদানের উত্থান আমাদের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য এক বিশাল হুমকি। এ ধরনের অনিয়ম ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করাই আমাদের এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য।” তিনি আরও বলেন, “স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফিরতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং মৌলিক সংস্কারই একমাত্র পথ। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে একটি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক রূপান্তরের দ্বার উন্মুক্ত হবে।”
বৈঠকে এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারও উপস্থিত ছিলেন। তারা উভয়েই তাদের বক্তব্যে রাজনৈতিক দলের ভিতরে গণতন্ত্রচর্চা, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, নাগরিক অধিকার ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সূত্র জানায়, এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সনদ’ তৈরির কাজ চলছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এটি দেশের রাজনৈতিক মহলে উত্থাপন করা হতে পারে। এ সনদে থাকবে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, দুর্নীতি দমন, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি রাজনীতির রূপরেখা।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, “এই উদ্যোগ কোনো একটি দলের নয়— এটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি জাতীয় প্রচেষ্টা। যেসব নাগরিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীরা আমাদের সঙ্গে একমত— তাদের সবাইকে সম্পৃক্ত করে এই প্রচেষ্টা সফল করতে হবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ