
ফাইল ছবি
ঢাকা, বাংলাদেশের অন্যতম মেগাসিটি, দিন দিন বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। যাত্রা বৃদ্ধি এবং যানজটের সমস্যাগুলো নিয়ে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে কিছুটা উন্নতির আশা ছিল, তবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এখনও আসেনি। আবাসন চাহিদা মেটাতে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের ফলে, একদিকে যেমন মাঠ ও জলাভূমি সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা এবং বিশুদ্ধ বাতাসের অভাব দেখা দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের শৈশবও হয়ে উঠছে বন্দি, কারণ তাদের খেলার জন্য কোনো খোলা মাঠ নেই।
এছাড়া ঢাকার অনেক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠের অভাব, যেখানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া নির্মিত এসব ভবন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে, ঢাকার পরিবেশের মান ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। মিরপুরের একটি সড়ক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়, যেখানে সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থান না থাকায়, সড়কের উপরে ময়লা ফেলা হচ্ছে এবং এলাকাবাসীকে দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে।
একইভাবে, ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়ছে। সড়কের মাঝেই টোল আদায় করা হচ্ছে, যার কারণে যানবাহনের গতি ধীর হচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। নগরবাসীরা এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন চাচ্ছেন, তবে শহরের উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পনাগত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় পূর্বের পরিকল্পনাগুলো বদলাতে হয়, যার কারণে প্রকল্পগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসছে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান মনে করেন, সিটি করপোরেশন এবং রাজউকের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি রয়েছে, এবং ঢাকার নগরায়ন অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে চলছে। তার মতে, শুধুমাত্র ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে শহরের বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব নয়।
এদিকে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, সরকার এখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে সুসংহত নগরায়নের দিকে মনোনিবেশ করছে। তার ভাষায়, "বাসযোগ্য ঢাকা তৈরি করতে আমরা একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করছি, যা আগামী মার্চে চূড়ান্ত হবে এবং এপ্রিলের মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হবে।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঢাকার জনসংখ্যার চাপ কমানো এবং জনসচেতনতা বাড়ানো হলে নগর সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ