
ছবি: সংগৃহীত
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এনবিআরের সংস্কার প্রক্রিয়ায় একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসের পাঁচদিন পর কলম বিরতি প্রত্যাহার করা হলেও বৈঠক শেষে পরিষদ দাবি করেছে, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি’।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২১ মে) সকাল ৯টা থেকে সারাদেশে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবারো বিক্ষোভে নামছেন। ঢাকায় এনবিআর প্রাঙ্গণে এবং বাইরে বিভিন্ন দপ্তরে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ অবস্থান কর্মসূচি। একইসাথে দুপুর ১২টায় এনবিআর ভবনের নিচতলায় অনুষ্ঠিত হবে এক আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং, যেখানে আগামী দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেবে ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন দুইজন উপদেষ্টা, রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান এবং এনবিআরের তিনজন সাবেক সদস্য।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে জানান, ‘এনবিআর নিয়ে দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে এবং ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’
তবে বৈঠক থেকে বের হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে কথা বলেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা। রাতেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা জানান, আলোচনায় সরকারপক্ষ কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি, বরং পূর্বে আলোচিত কিছু প্রস্তাব ও চিঠির বিষয়ে এড়িয়ে গেছেন উপদেষ্টারা। এ অবস্থায় আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি বলেই তারা মনে করেন। সুতরাং, পূর্বঘোষিত আন্দোলনের রূপরেখা অনুযায়ী বুধবার সকাল ৯টা থেকে পূর্ণদিবস অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন এনবিআরের অধীনস্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ঐক্য পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এনবিআরের আওতাধীন ঢাকার সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার সকাল ৯টা থেকে এনবিআর ভবনের নিচতলায় অবস্থান করবেন। ঢাকার বাইরের অফিসসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ দপ্তরে একইভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।
ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, এই কর্মসূচি চলবে দুপুর পর্যন্ত। তারপর এনবিআর চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ। সেখানে সম্ভাব্যভাবে কর্মবিরতি, কলমবিরতি, এমনকি অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঠামোগত সংস্কার ও পদোন্নতি নীতিমালায় স্বচ্ছতা আনার দাবিতে গঠিত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, এনবিআরের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রাজনৈতিক ও ব্যুরোক্রেটিক প্রভাবের কারণে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, জনবল কাঠামো এবং কর্মপরিধি সংক্রান্ত বিষয়ে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম চলছে। এই ইস্যুতে গত এপ্রিল থেকে একাধিকবার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিষদ নেতাদের আলোচনায় আহ্বান জানিয়ে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলে ঐক্য পরিষদ আন্দোলন স্থগিত করেছিল। কিন্তু আলোচনায় আশানুরূপ অগ্রগতি না থাকায় তারা আবারও বিক্ষোভে ফিরে যাচ্ছে।
আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের পথ আপাতত রুদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সরকার ও অর্থ বিভাগের সদিচ্ছার অভাবের অভিযোগ তুলে তারা বলেছে, প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হবে।
এই অবস্থায় এনবিআরের কার্যক্রম আবারো স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আয়কর রিটার্ন, ভ্যাট ফাইলিং, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজস্বসংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
বাংলাবার্তা/এসজে