
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা (এআরও) তাঁদের পুরোনো ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদবি—‘ইন্সপেক্টর’ ও ‘সুপারিনটেনডেন্ট’—পুনর্বহালের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন। এই দাবির পেছনে তাঁরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বর্তমান পদবির কারণে মাঠপর্যায়ে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় সংকটে পড়তে হচ্ছে, যা পেশাগত যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
রোববার (৫ মে) দুপুরে বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) একটি প্রতিনিধি দল এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে এ দাবি পেশ করেন। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি কে এম মাহবুব আলম ও মহাসচিব তানভীর আহমেদ। তাঁরা একটি বিস্তারিত চিঠির মাধ্যমে দাবি জানান, যাতে এনবিআরের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে এনবিআরের মাঠপর্যায়ের পদবি পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে ‘ইন্সপেক্টর’ ও ‘সুপারিনটেনডেন্ট’ নামে ঐতিহ্যবাহী দুটি পদবি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে যথাক্রমে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) ও রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) পদবি চালু করা হয়। যদিও প্রশাসনিক কাঠামোয় পদমর্যাদার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি, তবে এই পদবি পরিবর্তনের ফলে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কর্মকর্তারা।
বাকাএভের চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের কাস্টমস বিভাগে এখনো ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবিই প্রচলিত রয়েছে। ফলে এসব দেশের সঙ্গে যৌথ অভিযান, সীমান্তে সমন্বয় কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথে সমুদ্র ও বিমানবন্দরভিত্তিক কার্যক্রমে বাংলাদেশের রাজস্ব কর্মকর্তারা পরিচয় দিতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। বিশেষ করে বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন, বিমানের পাইলট ও বিদেশি কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে তাঁরা নিজেদের পরিচিতি দিতে গিয়ে ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’-এর মুখে পড়েন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, "বিশ্বব্যাপী কাস্টমস বিভাগের একটি স্বীকৃত ও সম্মানজনক রূপ হলো ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি। এই দুটি পদ বহু দশক ধরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের পেশাগত মর্যাদার প্রতীক হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিষ্ঠিত। অথচ বাংলাদেশে এসব ঐতিহাসিক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদবি হঠাৎ করে বাদ দিয়ে এমন পদবি চালু করা হয়েছে, যা বিশ্ব কাস্টমস ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"
বাকাএভ-এর মতে, এটি শুধু একটি নাম পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং এটি কাস্টমস বিভাগের পেশাগত ভাবমূর্তি, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও পরিচিতির প্রশ্ন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন পদবি দিয়ে কাগজে-কলমে দায়িত্ব পালন করলেও, বাস্তবে তা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কোনো কার্যকর পরিচয় দিচ্ছে না।
সংগঠনের নেতারা আরও দাবি করেন, পদবি পুনর্বহাল করলে সরকারের কোনো বাড়তি ব্যয় বা প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে না। এটি শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যার মাধ্যমে কাস্টমস বিভাগ তার ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ফিরে যেতে পারবে।
এদিকে এনবিআরের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই দাবিটি যুক্তিযুক্ত। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় সংকট একটি বাস্তব সমস্যা। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন হবে।”
বাকাএভ নেতারা বলেন, তারা আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন। পাশাপাশি এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা।
দাবিটি শুধু পদবি নয়, বরং রাজস্ব প্রশাসনে একটি মানসম্মত ও কার্যকর পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এসজে