ছবি: সংগৃহীত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ বিনিষ্টকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রবিবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আয়োজিত সভায় ইসি এই নির্দেশনা দেয়। সভা শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, ‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করব।
নির্বাচনী উৎসব আবার ফিরে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর এক হামলায় জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি শাহাদাতবরণ করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সাত থেকে আট দিন আমরা শোকে মুহ্যমান ছিলাম। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চলমান আছে এবং অন্যান্য জায়গায় নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে অতি দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘মেসেজ ক্লিয়ার, কাউকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে দেওয়া হবে না। যারা দস্যুতা করতে চায়, যারা আমার ভাইকে হত্যা করতে চায়, যারা ভোটে বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তাদের প্রতি মানবিক হব না। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হবে। যারা আবেগ ব্যবহার করে অপকর্ম করেছে, তার প্রতিদান তারা পাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আজ (রবিবার) সুনির্দিষ্টভাবে অনেক নির্দেশনা দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে—নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড আর সহ্য করা হবে না। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষতি করে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড নিরুৎসাহ করতে এবং প্রয়োজনে বাধা দিতে যা করা প্রয়োজন তা তাঁরা করবেন। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, এখন থেকে মাঠ পর্যায়ে যৌথ বাহিনীর অপারেশন পুনরায় চালু হবে। যৌথ বাহিনীর অপারেশনের অন্যতম লক্ষ্য হবে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
অর্থাৎ সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষ, ভোটার, প্রার্থী ও দলগুলোর মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করা। আমরা এলাকাভিত্তিক চেকপয়েন্ট এস্টাবলিশ করে চেকপয়েন্ট অপারেশনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বিশেষ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারেও বলা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় অস্ত্রের আনাগোনা আছে, সেসব এলাকায় অধিকতর খবরদারি করতে বলা হয়েছে।’
তফসিল ঘোষণার পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে কি না জানতে চাইলে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এই প্রশ্নের জবাব আজ আমরাও জানতে চেয়েছি। কারণ এগুলো আমাদেরও কনসার্ন। আপনারা যে বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন, এগুলো নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। কারণ এটার সঙ্গে অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশের সম্পৃক্ততা আছে। কারণ তফসিল ঘোষণার পরে যাই হোক না কেন, সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক ঘটনা ঘটলেও সেটার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়ে। এ জন্য বিষয়গুলো আমরা জানতে চেয়েছি। আমরা অবহিত হয়েছি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ওভারপাওয়ার করে স্বার্থান্বেষী কিছু লোক এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। এই সুযোগ আর দেওয়া হবে না।’
আগের নির্বাচনগুলোতে গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনে গোয়েন্দা বাহিনী কতটুকু সহযোগিতা করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থা তাদের কাজ করছে। আগস্টের ৫ তারিখের পর থেকে আমাদের পুলিশের প্রতি এক ধরনের নির্দেশনা ছিল। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, কেউ কেউ এই নির্দেশনার খারাপ সুযোগ নিয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে বাহিনীগুলোকে বলেছি। আমরা মানবিক হব, যারা মানবিক তাদের প্রতি। যারা দস্যুতা করতে চায়, নির্বাচনে পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, আমার ভাইকে হত্যা করতে চায়, তাদের প্রতি মানবিক হওয়ার দরকার নেই। মেসেজ ভেরি ক্লিয়ার।’
ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ বলেন, ‘সার্বিকভাবে যদি আমরা বলি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আছে।’
শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ভোটের মাঠের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড ডেফিনেটলি একটা বড় ঘটনা। এই ঘটনা মাঠ পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে একটা প্রভাব ফেলেছে। যারা নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে চায়, আন্ডারমাইন্ড করতে চায়, তাদের টার্গেট কিন্তু মূলত শহর এলাকা। খেয়াল করে দেখবেন এবং তারা খুব অর্গানাইজভাবে টার্গেটেড কর্মকাণ্ড করছে, যাতে করে এটার প্রভাব এত বেশি হয় যেন জনগণের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এগুলো সবই চিহ্নিত করেছি।’
ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে হামলা ও আগুনের ঘটনায় ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘এই ব্যাপারটা আমরা ইনডাইরেক্ট আলোচনায় এসেছি। কারণ এটা একটা ভ্যান্ডালিজম এবং এটাও আমাদের নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। ঘটনাটা কিন্তু নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি রিলেটেড না। তদপুরি আমরা ডিসকাশনে নিয়ে এসেছি। কারণ এটার সঙ্গে আমাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি এটার সঙ্গে রিলেটেড।’
তফসিল ঘোষণার পর থেকে আজ (রবিবার) পর্যন্ত দুই দফা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির সভা হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ইসি কেমন দেখছে জানতে চাইলে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমি যদি একটু রেটরিক্যালি বলি, ধরেন একটা বড় উৎসবের সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তখন কি উৎসব ব্যাহত হয় না। আমাদের তো তাই হয়েছে। এখন আমাদের এই শোকটাকে শক্তিতে পরিণত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যারা আমাদের উৎসবের পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে চায় তারা ব্যর্থ হবে। উৎসবের পরিবেশ ফেরত আসবে।’
গতকাল প্রথমবারের মতো দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। বৈঠকের আগে নির্বাচন ভবনে তিন বাহিনীর প্রধানরা পৌঁছলে ইসি সচিব তাঁদের আলাদা আলাদাভাবে অভ্যর্থনা জানান। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
এর পর দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে সিইসির সভাপতিত্বে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিইসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকরা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



