ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ইন্দো–গাঙ্গেয় সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত বিস্তীর্ণ জনপদ বর্তমানে এক মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছে। এক সময়ের উর্বর এই অঞ্চলটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুস্তরগুলোর একটির নিচে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের এই অঞ্চলে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। বায়ুদূষণ এখন আর শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি বড় উন্নয়ন সংকট হয়ে উঠেছে। দূষণের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে এবং এতে আঞ্চলিক জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সীমান্ত অতিক্রম করে আসা দূষণ মোকাবিলায় দ্রুত সমন্বিত আঞ্চলিক উদ্যোগ নেওয়া না হলে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি—দুটিই দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘পরিবর্তনের নিশ্বাস : ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এবং হিমালয়ের পাদদেশে (আইজিপি-এইচএফ) পরিষ্কার বাতাসের সমাধান’ শীর্ষক বইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত আইজিপি–এইচএফ অঞ্চলটি বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এসব দেশে দূষণের মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রান্না ও গরমের কাজে কঠিন জ্বালানি ব্যবহার, প্রয়োজনীয় ফিল্টার প্রযুক্তি ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি ও জৈববস্তু পোড়ানো, অদক্ষ অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের ব্যবহার, কৃষকদের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, অকার্যকর সার ও সার ব্যবস্থাপনা এবং পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পোড়ানো। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে বায়ু দূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
প্রতিবেদনে পরিষ্কার বাতাস নিশ্চিত করতে সমাধানগুলোকে তিনটি পরস্পরসংযুক্ত মূল ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, রান্না, শিল্প, পরিবহন, কৃষি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎস পর্যায়েই নির্গমন কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে পরিষ্কার বাতাসে রূপান্তরের সময়ে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তৃতীয়ত, নিয়ন্ত্রক কাঠামো, বাজারভিত্তিক উপকরণ এবং আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে বহু-খাত ও বহু-বিভাগভিত্তিক অগ্রগতি টেকসই থাকে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশগত অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, এই প্রতিবেদনটি দেখায় যে সমাধানগুলো নাগালের মধ্যে রয়েছে এবং নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের জন্য সমন্বিত, সম্ভাব্য এবং প্রমাণ-ভিত্তিক সমাধানগুলো ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ দেওয়া। দক্ষিণ এশিয়ার উদ্যোগ, পরিবার এবং কৃষকদের জন্য পরিষ্কার প্রযুক্তি এবং অনুশীলন গ্রহণের জন্য এবং সরকারগুলোকে তাদের সমর্থন করার জন্য শক্তিশালী আর্থিক ও অর্থনৈতিক যুক্তি রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দেশগুলোকে কার্যকরভাবে সমাধান বাস্তবায়নে সহায়তা করতে প্রতিবেদনে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, পরিকল্পনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহজপ্রাপ্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আচরণ ও বিনিয়োগকে পরিবেশবান্ধব ধারায় নিতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিভিন্ন খাতের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন, নীতিগত সম্মতি নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নকে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চতুর্থত, আধুনিক ও দক্ষ শিল্প কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্লিন এনার্জি, পরিবহন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ অনুশীলন ব্যবস্থাপক অ্যান জেনেট গ্লোবার বলেন, ক্লিন এয়ার নিশ্চিত করতে স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ধারাবাহিক সহযোগিতা, টেকসই অর্থায়ন এবং শক্তিশালী বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সরকারগুলো দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। এই পথ অনুসরণ করলে লাখো প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং সবার জন্য ক্লিন এয়ার নিশ্চিত করা যাবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



