
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে বৃহস্পতিবার সকালে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের ফলে ফিলিপাইনের জাতীয় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা তাৎক্ষণিকভাবে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি, তবে ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু এবং প্রাকৃতিক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে স্থানীয় প্রশাসন অবিলম্বে জরুরি সতর্কতা ও ত্রাণ ব্যবস্থার প্রস্তুতি শুরু করেছে। খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টারের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের সময় ঢেউয়ের উচ্চতা ফিলিপাইনের কিছু উপকূলীয় এলাকায় ১০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে মিন্দানাও উপকূলবর্তী শহর এবং গ্রামাঞ্চলে ইতিমধ্যেই বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুধুমাত্র ফিলিপাইনেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ-তেও সুনামি ঝুঁকি রয়েছে। প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্যমতে, এই দুটি দেশে জলোচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের উচ্চতা ১ মিটার বা ৩ ফুটেরও বেশি হতে পারে। এতে করে উপকূলবর্তী এলাকায় সর্তক অবস্থান গ্রহণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিপাইনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইতিমধ্যেই ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চালু করেছে। মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানান্তরের জন্য স্থানীয় পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ভূমিকম্পের সময় কম্পন অনুভূত হয়েছে মিন্দানাও ছাড়াও দক্ষিণ ফিলিপাইনের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশ কিছু ভবন এবং অবকাঠামোতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তবে মৃত্যুর বা গুরুতর আঘাতের খবর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনগণকে সড়কপথে অবরুদ্ধ হওয়া থেকে বিরত থাকার এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
ফিলিপাইনের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে সময়ে সময়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে। মিন্দানাও দ্বীপটি ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’-এর মধ্যে অবস্থান করছে, যেখানে ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়মিত ঘটে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। প্যাসিফিক সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও পালাউর উপকূলীয় এলাকায় সুনামি ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করছে। এই অঞ্চলের জাহাজ ও নৌপরিবহনকেও তৎপর হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ত্রাণ বিতরণ, জরুরি চিকিৎসা সেবা, এবং আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া সুনামি সতর্কতার আওতায় উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনামি ঢেউ সাধারণত ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দুর কাছাকাছি উপকূলে ১৫–৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছায়। তাই প্রতিটি পদক্ষেপ দ্রুত এবং সুচিন্তিত হতে হবে। ফিলিপাইন সরকার স্থানীয় জনগণকে রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে নিয়মিত সতর্কবার্তা জারি করছে।
এই ভূমিকম্প ও সম্ভাব্য সুনামি ঝুঁকি এখনও চলমান এবং ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য, স্থানীয় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত কার্যকর করা হচ্ছে যাতে প্রাথমিকভাবে কোনো প্রাণহানি বা বড় ধ্বংসক্ষতির ঘটনা এড়ানো যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ