
ছবি: সংগৃহীত
বলিউড তারকা কবীর বেদীর কন্যা পূজা বেদী শুধু তার অভিনয় নয়, নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বহুবার শিরোনামে এসেছেন। একদিকে যেমন তিনি ১৯৯০-এর দশকে বলিউডে নিজস্ব অবস্থান গড়ে নিয়েছেন, তেমনি প্রেম, সম্পর্ক এবং বিবাহ নিয়ে তার জীবন যেন রোমাঞ্চকর এক কাহিনি। ৫৫ বছরে পা দেওয়া এই অভিনেত্রী মোট ছয়বার প্রেমে পড়েছেন—একেকটি সম্পর্ক তার জীবনে এনেছে ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা, শিক্ষা আর অনুভূতির নতুন অধ্যায়।
পূজার জীবনের সবচেয়ে বড় ছায়া হয়তো তার বাবা কবীর বেদী। বলিউডের এই কিংবদন্তি অভিনেতা চারবার বিয়ে করেছিলেন এবং জীবনে বহু সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। সেই বৈচিত্র্যময় পারিবারিক পরিবেশেই বড় হয়েছেন পূজা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি অকপটে বলেন, “আমার বাবা চারবার বিয়ে করেছেন, আর তাতেই আমি পেয়েছি দারুণ কিছু সৎ মা, যাদের আমি সত্যিই ভালোবাসি।” সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতাই পূজাকে প্রেম ও সম্পর্ক নিয়ে আরও খোলা মনোভাবাপন্ন করেছে।
পূজা বেদীর প্রথম হাইপ্রোফাইল প্রেম ছিল অভিনেতা ও প্রযোজক আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে। আদিত্য তখন অভিনেত্রী জরিনা ওয়াহাবের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময়েই পূজার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তারা একটি গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তবে সম্পর্কটি টেকেনি। পূজার অভিযোগ অনুযায়ী, আদিত্য একবার তাদের গৃহপরিচারিকার সঙ্গে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন, যা সম্পর্কের ইতি ঘটায়। এটি ছিল পূজার জীবনের প্রথম বড় ধাক্কা।
১৯৯৪ সালে পূজা প্রেম করে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী ফারহান ফার্নিচারওয়ালাকে। এই বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তনও করেছিলেন পূজা। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে নাম নিয়েছিলেন ‘নুরজাহান’। তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ কিছুদিন স্থায়ী হয়। তারা দুটি সন্তানের জন্ম দেন—মেয়ে আলায়া এবং ছেলে ওমর। বর্তমানে আলায়া এফ বলিউডে একজন উদীয়মান অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এই দাম্পত্যও চিরস্থায়ী হয়নি। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর ২০০6 সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।
‘নাচ বলিয়ে ৩’ রিয়্যালিটি শো করতে গিয়েই পূজার জীবনে আসেন কোরিওগ্রাফার হানিফ হিলাল। মঞ্চে একসঙ্গে নাচতে নাচতেই জন্ম নেয় ভালোবাসা। সম্পর্কটি মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলেছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সে প্রেম ভেঙে যায়। ২০০৮ সালের শেষ দিকে তারা আলাদা হয়ে যান। পূজা পরে বলেন, সম্পর্কটি ভালোই ছিল, কিন্তু নানা বাস্তব কারণে টিকিয়ে রাখা যায়নি।
এরপর পূজা আবার প্রেমে পড়েন এক ব্যক্তির সঙ্গে—তাদের প্রেম ছিল অন্তরঙ্গ ও স্থায়ী। তারা একসঙ্গে ১৮ মাস কাটান এবং বিয়ের পরিকল্পনাও করেন। কিন্তু পারিবারিক আপত্তির কারণে এই সম্পর্কও শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায়নি। পূজা এই সম্পর্কে খুব কম কথা বলেছেন, তবে জানিয়েছেন, সেই সময়টি তার জীবনের অন্যতম আবেগঘন অধ্যায় ছিল।
২০১১ সালে ‘বিগ বস ৫’-এর সেটে পূজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে অভিনেতা আকাশদীপ সায়গলের। তাদের সম্পর্ক এতটাই গভীর হয়ে ওঠে যে, আকাশদীপ নিজের বাইসেপে পূজার নামের ট্যাটু পর্যন্ত করিয়ে ফেলেন। মিডিয়ায় তখন এ নিয়েও ব্যাপক গুঞ্জন চলে। কিন্তু সেই সম্পর্কও বেশিদিন টেকেনি। ২০১৩ সালে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। পূজা পরবর্তীতে জানান, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরও তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা রয়েছে।
ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পূজা বেদী বাগদান সারেন ব্যবসায়ী মানেক কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে। সামাজিক মাধ্যমে তারা নিজেদের ছবি শেয়ার করেন, প্রেম নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তবে তাদের বিয়ের কোনো সংবাদ এখনও সামনে আসেনি। যদিও তারা এখনো যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
প্রেম এবং বিয়ের বিষয়ে পূজার দৃষ্টিভঙ্গি বরাবরই সাহসী ও বাস্তবমুখী। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো আপনাকে শক্তিশালী করে তোলে, দুর্বল নয়। একটা বিয়ে ব্যর্থ হলে পরবর্তী বিয়ে সফল হবে না—এমন কোনো কথা নেই।” বাবার জীবনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বাবা চারবার বিয়ে করেছেন, কিন্তু তিনি অসাধারণ কিছু নারীকে পেয়েছেন। আমিও পেয়েছি চমৎকার সৎ মা। সুতরাং জীবনে ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়।”
পূজা বেদী বরাবরই একজন স্বাধীনচেতা, সাহসী নারী হিসেবে পরিচিত। সমাজ ও সম্পর্কের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি নিজের পথ নিজে তৈরি করেছেন। তার ছয়টি প্রেম—প্রতিটিই একেকটি অভিজ্ঞতার গল্প, শিখন আর স্বাতন্ত্র্যের পরিচায়ক। পূজার জীবন দেখিয়ে দেয়—প্রেম ও সম্পর্ক যতবারই ভেঙে যাক, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান ধরে রাখলে জীবন থেমে থাকে না।
বলিউডের চমকপ্রদ আলোঝলমলে জগতে পূজা বেদী এক অনন্য নাম—যিনি ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এখনো খোলা মন আর মাথা উঁচু করে বাঁচতে জানেন। প্রেম তার জীবনে এসেছে, গেছে; কিন্তু পূজা নিজের মতো করে বাঁচার সাহস কখনো হারাননি। সেই সাহসী যাত্রাই তাকে আলাদা করে রাখে বলিউডের রঙিন দুনিয়ায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ