
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হতে যাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। অর্থনৈতিক চাপে পড়া অন্তর্বর্তী সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা ও পরিধি বিস্তারে জোর দেওয়া হচ্ছে। আয়কর, মূসক (ভ্যাট) ও শুল্ক খাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে আসন্ন বাজেটে। নিচে সম্ভাব্য বড় ১২টি পরিবর্তন তুলে ধরা হলো—
১. ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে
মূল্যস্ফীতির প্রভাব বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। তবে করের হার (৫%-২৫%) অপরিবর্তিত থাকছে।
বিশেষ শ্রেণির করমুক্ত সীমা:
নারী: ৪ লাখ টাকা
প্রতিবন্ধী/তৃতীয় লিঙ্গ: ৪.৭৫ লাখ টাকা
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: ৫ লাখ টাকা
২. ন্যূনতম কর সবার জন্য ৫ হাজার টাকা
বর্তমানে এলাকাভেদে ন্যূনতম কর ৩, ৪ ও ৫ হাজার টাকা হলেও এবার তা সব এলাকায় সমান ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এতে অঞ্চলে অঞ্চলে কর বৈষম্য কমবে বলে ধারণা।
৩. কর্পোরেট ট্যাক্সের শর্ত শিথিল
বিগত বাজেটগুলোর মতো এবারও কর্পোরেট করের হার না কমিয়ে কর ছাড় পাওয়ার শর্তগুলো সহজ করা হচ্ছে। এর ফলে কিছু ব্যবসায়িক সুবিধা বাড়বে, বিশেষ করে যারা পূর্বে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হতো।
৪. আয়কর রিটার্ন: অনলাইন বাধ্যতামূলক হতে পারে
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবী ও কিছু কোম্পানির জন্য অনলাইন রিটার্ন বাধ্যতামূলক। এবার থেকে তা সব ব্যক্তি ও কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
৫. ২০০টি পণ্যে অগ্রিম কর বসানো হচ্ছে
করমুক্ত প্রায় ২০০টি আমদানি পণ্যে ২% অগ্রিম আয়কর (AIT) আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসার সম্ভাবনা।
শুভ্রত হওয়া পণ্যের তালিকা:
খাদ্যদ্রব্য: আলু, পেঁয়াজ, ডাল, ছোলা, ভুট্টা, সয়াবিন
কাঁচামাল: তুলা, মানবসৃষ্ট তন্তু
চিকিৎসা সরঞ্জাম, সার, অপরিশোধিত তেল, চিনি
প্রযুক্তিপণ্য: প্রিন্টার, রাউটার, বিমান ইঞ্জিন, বাস ইত্যাদি
৬. সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরে বিনিয়োগে রিটার্ন বাধ্যতামূলক নয়
সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর পিএসআর (কর রিটার্ন দাখিল সনদ) লাগবে না। শুধু ই-টিআইএন নম্বর দিলেই চলবে।
এ ছাড়াও কিছু পেশাজীবী সংগঠনে সদস্য হতে রিটার্ন বাধ্যতামূলক শর্ত শিথিল করা হতে পারে।
৭. ভূমি নিবন্ধনে কর কিছুটা কমছে
কাঠার পরিবর্তে শতাংশ ভিত্তিক কর ও ফি নির্ধারণ, এবং অগ্রিম কর কিছুটা হ্রাস করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন খাতে এনবিআর এখনও বড় রাজস্ব ধরে রাখতে চায়।
৮. পুঁজিবাজারে উৎসে কর কমছে
ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনে উৎসে কর হ্রাস করার চিন্তা রয়েছে। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত সহজ এবং কর ছাড় দেওয়া হতে পারে।
৯. টার্নওভার কর বাড়ছে
বর্তমানে বছরে ৩ কোটির বেশি টার্নওভারে ০.৬% কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এতে সরকারের অতিরিক্ত ৩,৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
১০. কর ফাঁকি রোধে সর্বনিম্ন করহার কাঠামোতে পরিবর্তন
বর্তমানে ৫ ধরনের করদাতার জন্য ভিন্ন হার রয়েছে। এটি আরও বিস্তারিত ও কার্যকর কাঠামোয় রূপান্তর করার চিন্তা করা হচ্ছে, যাতে কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন হয়।
১১. যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ পণ্যে শুল্ক ছাড়
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি সামলাতে ১০০ রকম পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে। এতে অস্ত্র, তেল, প্রযুক্তিপণ্যের আমদানি খরচ কিছুটা কমতে পারে।
১২. ব্যবসায়ীদের জন্য ডিজিটালাইজেশনে জোর
অনলাইন রিটার্ন, ই-পেমেন্ট, ই-টিআইএন যাচাই ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কর পরিপালন বাড়াতে যাচ্ছে এনবিআর। ব্যবসায়িক খাতকে আরও ডিজিটালভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
এই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের চাপ থাকলেও সরকার করের হার বাড়িয়ে জনরোষ সৃষ্টি করতে চায় না। তাই কর পরিধি বাড়ানো, কর ফাঁকি রোধ, ডিজিটাল রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা, আর্থিক খাতের শর্ত সহজ করার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে একটি ব্যালান্সড অ্যাপ্রোচ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ