ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের ঋণসংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ে আগাম ও কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের বাইরেও কাজ চালিয়ে যাবে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও রাত ১০টা পর্যন্ত সিআইবির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি যেন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে না পারেন, সে লক্ষ্যেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে ঋণখেলাপি হয়েও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এবার সে ধরনের অনিয়ম বন্ধে সরকার ও নির্বাচন কমিশন একযোগে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সারাদেশের প্রতিটি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ঋণ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডেটাবেইজ থেকে যাচাই করবে। তথ্য যাচাই কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিআইবি চালু থাকবে। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এদিকে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের জামানত এবং ভোটার তালিকার সিডি কেনার অর্থ জমা দেওয়ার সুবিধার্থে আগামী শনিবার সারাদেশের তপশিলি ব্যাংকের সব শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এসব অর্থ ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার অথবা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংক খোলা রাখার ফলে প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে জামানত জমা ও ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করতে পারবেন। কারণ, এর আগে বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে টানা কয়েক দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত ছিল।
আইনগত দিক থেকেও ঋণখেলাপি প্রার্থীদের বিষয়ে এবার কঠোরতা আরও বাড়ানো হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। শুধু মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের সময়ই নয়, সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি হওয়া বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশন তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই বৈঠকগুলোতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঋণখেলাপিদের বিষয়ে এবার কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সে কারণেই সিআইবির কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে চলতি মাসের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় সব তপশিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীদের সরাসরি নির্দেশনা দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, কোনো প্রার্থীর ঋণসংক্রান্ত তথ্য গোপন করা যাবে না এবং ‘আনরিপোর্টেড’ বা গোপন কোনো ঋণ থাকলেও তা অবশ্যই সিআইবি ডেটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তবে একই সঙ্গে গভর্নর স্পষ্ট করে বলেন, যাচাই কার্যক্রমের নামে অহেতুক হয়রানি করা যাবে না। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডের বিল বা অন্যান্য ফি সময়মতো পরিশোধ না করার মতো ছোটখাটো কারণে কাউকে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। যাচাই প্রক্রিয়ায় সঠিক আইন ও বিধিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করেছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। এরপর ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি এবং ভোটের দুই দিন আগে, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণখেলাপি যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আগাম ও কঠোর প্রস্তুতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করবে। একই সঙ্গে এতে সংসদে আর্থিক অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



