ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংক্রান্ত সকল অনলাইন কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত 'আইভাস' (iVAS) সিস্টেমের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারি হিসাব ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার 'আইবাস++' (iBAS++) এর সঙ্গে নামের সাদৃশ্য ও উচ্চারণগত মিলের কারণে নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্ভূত বিভ্রান্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা নিরসনেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সর্বশেষ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভ্যাট-সংক্রান্ত এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নতুন নামকরণ করা হয়েছে 'ই-ভ্যাট সিস্টেম'। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এনবিআর থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই পরিবর্তনের বিষয়টি সর্বসমক্ষে জানানো হয়।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়েছে, শুধুমাত্র নামের পরিবর্তনই ঘটেছে; সিস্টেমের কার্যকারিতা, বৈশিষ্ট্য বা ব্যবহারকারীদের জন্য প্রণীত কোনো নিয়ম-কানুনে কোনো রকম পরিবর্তন আনা হয়নি। 'আইভাস' এর আওতায় পূর্বে যেসব সেবা ও কার্যক্রম প্রদান করা হতো, তার সবকটিই এখন 'ই-ভ্যাট সিস্টেম' এর মাধ্যমেই একই ধারাবাহিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে অব্যাহত থাকবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো একটি স্বতন্ত্র ও সহজে শনাক্তযোগ্য পরিচয় তৈরি করে ভ্যাট প্রশাসনের ডিজিটাল প্রক্রিয়াগুলোকে আরও সুসংহত, প্রবেশযোগ্য এবং ব্যবহারকারীবান্ধব করে তোলা।
নতুন 'ই-ভ্যাট সিস্টেম'-এর অধীনে ভ্যাট নিবন্ধন করার পুরো প্রক্রিয়া, ভ্যাট রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে চালান প্রদান ও ব্যবস্থাপনা, অনলাইন ভ্যাট পেমেন্ট (ই-পেমেন্ট) কার্যক্রম সম্পাদন এবং ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করা যাবে। এটি ভ্যাটদাতাদের জন্য অফিসে গিয়ে লাইন দিতে হয়—এমন ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে এবং ভ্যাট প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
এনবিআর কর্তৃপক্ষ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত কেবল বিভ্রান্তি দূর করাই নয়, বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিস্টেমটিকে আরও আধুনিক, দ্রুততর ও বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। সিস্টেমটির কার্যক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা এবং ব্যবহারকারীদের জন্য এটি আরও সহজবোধ্য করতে ক্রমাগত কারিগরি উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলমান রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্ল্যাটফর্মে আরও নতুন ফিচার ও সেবা সংযোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এই পরিবর্তনকে কর বিশেষজ্ঞরা একটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, 'আইভাস' ও 'আইবাস++' এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের নামের মিল জনগণ এবং এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্যও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা অনেক সময় দেরি ও ভ্রান্তির সৃষ্টি করত। সুনির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র নাম ('ই-ভ্যাট সিস্টেম') ব্যবহারের মাধ্যমে এই জটিলতা দূর হবে এবং ভ্যাটদাতারা সহজেই সংশ্লিষ্ট ওয়েব পোর্টাল বা সেবাটি শনাক্ত করতে পারবেন। এটি ডিজিটাল কর প্রশাসনের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে আরও বেগবান করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ, মন্ত্রণালয় ও স্টেকহোল্ডারদের এই নতুন নাম ব্যবহারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ওয়েব ঠিকানা বা লগইন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীদের কোনো অসুবিধা হবে না। আগের মতোই নির্ধারিত পোর্টালের মাধ্যমে তারা সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।
সর্বোপরি, 'ই-ভ্যাট সিস্টেম' নামকরণের মধ্য দিয়ে ভ্যাট ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি একটি নতুন ও সুস্পষ্ট পরিচয় পেল। এটি সরকারের ডিজিটালীকরণ প্রচেষ্টার একটি যৌক্তিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যার লক্ষ্য হলো নাগরিক সেবাকে আরও সহজলভ্য, দ্রুততম এবং সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আগামী দিনগুলোতে এই সিস্টেম ভ্যাট রাজস্ব আহরণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



