ছবি: সংগৃহীত
ভারতে বাংলাদেশ মিশনের কাছে সহিংস বিক্ষোভের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াহ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ গত ১০ দিনের মধ্যে ভারতের হাইকমিশনারকে এবং ভারত সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে দ্বিতীয়বারের মতো তলব করেছে।
দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে মিশনগুলোর সামনে বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি তলবের ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ করে গত বছর আগস্টে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তত ছয়বার ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানানোসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এবারের তলবে দুই দেশই নিজেদের মিশনগুলোর নিরাপত্তা দাবি করেছে।
এদিকে ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস হত্যার প্রতিবাদে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও মুম্বাইয়ে। নয়াদিল্লিতে গতকালের বিক্ষোভ মিছিলটি ছিল আগের দিনের চেয়ে বড়।
নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের কাছাকাছি এলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। এরপর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়।
নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে গত সোমবারই ভারতে ভিসা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। গতকাল সকালে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানাতে এবং ভারতে বাংলাদেশের মিশনগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানোই ছিল ওই তলবের লক্ষ্য। এ নিয়ে গত ১০ দিনে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও কনস্যুলার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা ঘটনার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানাতে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত শুক্রবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং গত সোমবার শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে উগ্রবাদীদের ভাঙচুরের বিষয়টি আলোচনায় তোলা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হাইকমিশনে পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানায়। এসব ঘটনা কেবল কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে না, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তি ও সহনশীলতার নীতিকেও ক্ষুণ্ন করে।
বাংলাদেশ সরকার ভারতকে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করেছে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। এতে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও স্থাপনার মর্যাদা ও নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে।
জানা গেছে, দিপু হত্যার প্রতিবাদে দিল্লি, কলকাতা ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চসহ হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠন। গতকাল সকাল থেকে চলে এই বিক্ষোভ।
লাঠি ও গেরুয়া রঙের পতাকা নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন অভিমুখে আসে। এ সময় তাদের আটকে দেয় পুলিশ। ব্যারিকেড ভেঙে ‘হাই সিকিউরিটি জোনে’র দিকে যেতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ।
কলকাতার শিয়ালদহ থেকে মিছিলের ডাক দেওয়া হিন্দু জাগরণ মঞ্চ জানায়, বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হবে এবং দিপু হত্যার ঘটনায় দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানানো হবে। তাদের বক্তব্য, দিপু হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেই চলবে না, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে।
অন্যদিকে শিলিগুড়িতেও দফায় দফায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। সেখানে সেবক রোডে থাকা বাংলাদেশের ভিসা আবেদন কেন্দ্র ঘেরাও করে চলে বিক্ষোভ। এমনকি ভিসা কেন্দ্রের গেট বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
দিল্লি-আগরতলা-শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা সাময়িক বন্ধ : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহাবুবুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ সময় ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ আশা করে, এই প্রতিশ্রুতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপে প্রতিফলিত হবে।
ভারতে বাংলাদেশের কোন কোন মিশনে ভিসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় বিবেচনায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ও আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভিসা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিলিগুড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ ভিসা আবেদন কেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



