ছবি: সংগৃহীত
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এবার তিনি রাজনৈতিক ময়দানে সরাসরি মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা রাজনৈতিক ও আইন মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি নমিনেশন চেয়েছি এবং আশাবাদী যে, আমি বিএনপির মনোনয়ন পাবো। বর্তমানে আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বে আছি। তবে যখন সময় আসবে, আমি পদত্যাগ করব এবং প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামব।”
তিনি এই মন্তব্য করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল সংক্রান্ত মামলার আপিল শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে। প্রসঙ্গত, এই মামলার শুনানিতেও আসাদুজ্জামান সরকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগের ঘোষণা এমন সময় এলো, যখন দেশজুড়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার হয়েছে এবং প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পরই আসাদুজ্জামান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি অতীতে দলটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি সেই পদ থেকে পদত্যাগ করে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে যোগ দেন। তৎকালীন সরকার তার যোগ্যতা ও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে তাকে দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়।
আইনজীবী মহলে তিনি একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনবিদ হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক মামলা পরিচালনা করেছেন। তবে রাজনৈতিক জীবনে ফেরার ঘোষণা অনেককেই বিস্মিত করেছে, কারণ সাধারণত রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলরা নির্দলীয় অবস্থানে থাকেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি আইনের মানুষ, কিন্তু আমি জনগণেরও মানুষ। এখন সময় এসেছে মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার। আমার এলাকার জনগণ অনেকদিন ধরে আমার কাছ থেকে প্রত্যাশা করছে আমি যেন তাদের পাশে দাঁড়াই। আমি সেই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি।”
ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তার নাম কিছুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এলাকাজুড়ে ইতোমধ্যে পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটের মাধ্যমে তার পক্ষে প্রচারণা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামানের জনপ্রিয়তা এলাকায় ভালো, বিশেষ করে আইনজীবী ও শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে।
বিএনপি এখনো ওই আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে দলীয় সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে তার প্রার্থীতা নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও তিনি ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রেখেছেন বলে জানা গেছে।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আসাদুজ্জামানের এই সিদ্ধান্ত অভূতপূর্ব এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল। কারণ রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার দায়িত্বে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ সাধারণত দেখা যায় না। তাই তার পদত্যাগ ও প্রার্থীতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক নতুন নজির তৈরি হতে যাচ্ছে।
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন। এখন যদি তিনি রাজনীতিতে যান, সেটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে পদত্যাগের পরই রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া উচিত, কারণ এই পদটি নিরপেক্ষতার প্রতীক।”
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসাদুজ্জামানের প্রার্থীতা ঝিনাইদহে বিএনপির অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারে। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাব ঐতিহ্যগতভাবে বেশি থাকলেও, একজন জাতীয় পর্যায়ের আইনজীবীর প্রার্থীতা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আসাদুজ্জামান অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মানবাধিকার, নির্বাচন, সংবিধান সংশোধন, এবং বিচার বিভাগীয় সংস্কার সংক্রান্ত মামলায় তিনি দৃঢ় যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। ফলে তার পদত্যাগের পর নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ নিয়েও সরকারপক্ষে নতুন হিসাব শুরু হতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, তার এই পদক্ষেপ বিএনপির জন্য কৌশলগত সুবিধা এনে দিতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে দলের মধ্যে আইনজীবী ও শিক্ষিত পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোয় নেতৃত্বের ভিন্নধর্মী বার্তা দিচ্ছে বিএনপি।
সব মিলিয়ে, অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ এটিকে সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি সরকারের প্রতি তার হতাশার বহিঃপ্রকাশ। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—তার প্রার্থীতা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



