
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। পহেলগামের হামলার জবাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের চালানো সশস্ত্র অভিযানে এখন আন্তর্জাতিক মহলও সরব। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের এই সামরিক হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, যা কূটনৈতিকভাবে গুরুতর বার্তা বহন করছে।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা ভারতের এই সামরিক পদক্ষেপকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক হিসেবে দেখছি। এই ধরনের সামরিক আগ্রাসন কখনোই শান্তি স্থাপন করতে পারে না। দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর এখনই সময়।”
গত সপ্তাহে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলায় একাধিক ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হন। ভারতের দাবি, এই হামলার পেছনে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেই ঘটনার পরই ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যার আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে টার্গেটেড আক্রমণ চালানো হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হামলা চালায়। হামলায় ধ্বংস হয় জঙ্গি ঘাঁটি, অস্ত্র মজুদ কেন্দ্র এবং লজিস্টিক রুট। পাকিস্তানের আইএসপিআর-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেছেন, ভারতের এ হামলায় বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ অকার্যকর ও উসকানিমূলক।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিশোধমূলক হামলা কখনো দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হয় না। আমাদের দুই পুরোনো মিত্র—ভারত ও পাকিস্তান—যদি এমন সামরিক সংঘাতে জড়াতে থাকে, তাহলে পুরো অঞ্চল অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চায়, উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করুক। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।”
ট্রাম্পের মন্তব্যের আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। দুই দেশের উচিত এখনই সহিংসতা বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে ফেরা।”
চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভারতের এই হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো ট্রাম্পের মন্তব্যের সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ভারতীয় রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, “ভারত তার নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান চালিয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী নয়।”
অন্যদিকে পাকিস্তানে ট্রাম্পের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে, “এটি ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র এবার কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।”
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ধরনের সরাসরি মন্তব্য অনেক সময় বৈদেশিক নীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যখন ভারতকে মার্কিন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গণ্য করা হয়, তখন এই নিন্দা স্পষ্টতই এক কূটনৈতিক চাপের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নয়টি স্থানে ভারতের অভিযানে দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্পষ্ট ও কড়া প্রতিক্রিয়া কেবল আন্তর্জাতিক উদ্বেগই বাড়ায়নি, বরং ভারতকেও চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। এখন দেখার বিষয়—ভারত এই ‘লজ্জাজনক’ মন্তব্যকে কীভাবে মোকাবিলা করে এবং ভবিষ্যতে কূটনৈতিক সমীকরণ কোন পথে মোড় নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ