
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের নদীগুলো যেন মরদেহের ভাসমান কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই উদ্ধার হয়েছে ৩০১ মরদেহ, যার মধ্যে ৯২টির পরিচয় অজ্ঞাত। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে অনেক।
বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু—সব নদীতেই হঠাৎ করে ভেসে উঠছে লাশ। নৌপথে চলাচলকারী মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। লঞ্চযাত্রী থেকে শুরু করে ফেরিঘাটের সাধারণ যাত্রী—সবাই ভয়ে প্রশ্ন তুলছেন, নদী কি এখন অপরাধীদের নিরাপদ আবাস?
কেরানীগঞ্জের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন— "প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গায় লাশ পাওয়া যায়। মনে হয়, নদী এখন লাশের ভাণ্ডার। আমাদের পরিবার নিয়ে নদীপথে চলাচল করতেই ভয় লাগে।"
অপরাধবিদ অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান মনে করেন— "একটি সমাজে যখন দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি বেড়ে যায়, তখন অপরাধীরা নির্ভয়ে অপরাধ করে। নদীতে লাশ ফেলা হচ্ছে কারণ এখানে প্রমাণ লোপাট করা সহজ। পরিচয় অজ্ঞাত থেকে যাওয়ায় মামলার অগ্রগতি হয় না।"
এমন পরিস্থিতিতে খুনের মামলাগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। নিহতদের পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আর অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নৌ-পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নদীতে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা ছিল ৪৪০। এ বছর জুলাই পর্যন্তই মিলেছে ৩০১ লাশ। তবুও বাহিনীটির হাতে পর্যাপ্ত প্রযুক্তি, জনবল বা বাজেট নেই।
নৌ-পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন— "নদীজুড়ে একইসঙ্গে টহল দেওয়া সম্ভব হয় না। লাশ ভেসে আসার অনেক আগে ফেলে দেওয়া হয়, ফলে পরিচয় শনাক্ত করাই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।"
অপরাধ বিশ্লেষক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন— "এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, বরং সামাজিক নিরাপত্তারও হুমকি। নদীর তীরবর্তী অপরাধপ্রবণ জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে নজরদারি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি।"
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শারমিন আরা বলেন— "এভাবে যদি অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে এটি হবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। সরকারের জরুরি ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া উচিত।"
স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে লাশ ফেলার প্রবণতা রোধে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের কথায়— "হত্যা করেই যদি লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া যায়, তাহলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে উঠবে। প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে।"
বাংলাবার্তা/এমএইচও