প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে যোগ দিতে ও সাধারণ বিতর্ক পর্বে ভাষণ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যসহ বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন তুলে ধরবেন। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিভাসন, রোহিঙ্গা সংকট ও জলবায়ু ন্যায্যতাও তার ভাষণে স্থান পাবে।’
বিশ্ব নেতারা নিউ ইয়র্কে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে ‘বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং বৈশ্বিক সংহতি পুনর্র্নিমাণ : সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব অর্জনের উদ্দেশ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসংক্রান্ত ত্বরান্বিত কর্মপন্থা’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জমায়েত হবেন।
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক ও বিতর্কে অংশ নেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। মোমেন জানান, সফরকালে বাংলাদেশ এবং হাঙ্গেরি, কাজাখস্তানের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ, বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী “এসডিজি সামিট ২০২৩”, “খাদ্য চিন্তা- এসডিজিগুলো তরান্বিত করতে খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবন সহযোগিতা”- শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বেঠক এবং উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের (এফএফডি) উপর উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে যোগ দেবেন।
কোভিড-১৯ এর কারণে যে সব দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে- তা কাটিয়ে উঠতে সেই সব দেশকে, তাদের টেকসই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে এই উচ্চ-পর্যায়ের ইভেন্টগুলো।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের প্রধানের আমন্ত্রণে ‘ক্লাইমেট এ্যম্বিশন সামিট’ শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা এবং ‘হাই-লেভেল ব্রেকফাস্ট সামিট অন ক্লাইমেট মবিলিটি’ সহ কয়েকটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি দূর করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে তার পরামর্শ দেবেন, তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার সরকারের পদক্ষেপও তুলে ধরবেন। কানাডা, গাম্বিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মালযয়েশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে আয়োজিত সাইড ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
‘কমিউনিটি ক্লিনিকের শেখ হাসিনা উদ্যোগ : মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীসহ সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ অর্জনে উদ্ভাবনী পদ্ধতি’, ‘মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া’, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ সম্পর্কিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এসব বৈঠকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্য তুলে ধরবেন।
মোমেন বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন এবং এই বিষয়ে কয়েকটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জনের চিত্র তুলে ধরবেন।
এছাড়া সফরকালে জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা বিষয়ক উপদেষ্টা, নবনির্বাচিত ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন।