ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। তার মন্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসাবে বর্ণনা করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উলটো ভারতেই সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের হত্যা, বাংলাদেশি সন্দেহে একজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা এবং বড়দিনের আয়োজনে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ঢাকা। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসএম মাহবুবুল আলম এসব কথা বলেন।
মাহবুবুল আলম বলেন, ভারতে মুসলিম-খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, গণপিটুনি, নির্বিচার আটক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধার ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই মাসে ভারতের ওড়িশায় একজন মুসলিম যুবক জুয়েল রানাকে নৃশংস হত্যার ঘটনা, বিহারে মুহাম্মদ আতাহার হোসেনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কেরালায় বাংলাদেশি সন্দেহে এক নিরীহ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন স্থানে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের ওপর গণপিটুনি-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
মুখপাত্র বলেন, গত সপ্তাহে বড়দিন উদযাপনকালে ভারতজুড়ে খ্রিষ্টানদের ওপর সংঘটিত গণসহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনাকে আমরা ঘৃণাজনিত অপরাধ ও লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতা হিসাবে দেখি।
মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে। আমরা মনে করি যে, প্রত্যেক দেশেরই দায়িত্ব তার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা ও মর্যাদা দেওয়া।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেসব মন্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে মিলে না। বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এমন কোনো বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বর্ণনা বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
বিবৃতিতে বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধমূলক ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়ন হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দিতে সেটার অপব্যবহার করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, কিছু মহলে বাছাইকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ ভারতীয় জনগণকে বাংলাদেশ, ভারতের বাংলাদেশি কূটনৈতিক মিশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যে ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন, তিনি ছিলেন তালিকাভুক্ত অপরাধী। চাঁদাবাজির সময় তার মুসলিম সহযোগীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় তার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঘটে, যাকে পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়। এই অপরাধমূলক ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা বাস্তবসম্মত নয়, বরং বিভ্রান্তিকর।
ভারতের বিভিন্ন মহলকে বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ। এসব সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পারস্পরিক আস্থার চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে বলেও বলা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবার বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, উগ্রবাদীদের হাতে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে নিরন্তর সহিংসতা চলছে, তা গভীর উদ্বেগের।
তিনি বলেন, ময়মনসিংহে গার্মেন্টকর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, স্বাধীন বিভিন্ন সূত্রে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও জমি দখলসহ দুই হাজার ৯০০টির বেশি সহিংসতার ঘটনার নথি রয়েছে। এই ঘটনাগুলোকে শুধু মিডিয়ার অতিরঞ্জন বলে উড়িয়ে দেওয়া বা রাজনৈতিক সহিংসতা হিসাবে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের অবস্থান শুরু থেকেই পরিষ্কার ও ধারাবাহিক। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাই। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে রয়েছে ভারত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



