ছবি: সংগৃহীত
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাদক চোরাচালানের আরেকটি বড় প্রচেষ্টা ভেস্তে দিয়েছে এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক) বিভাগ। নিয়মিত স্ক্রিনিং কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় এক আন্তর্জাতিক যাত্রীর লাগেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১,৬৪০ (এক হাজার ছয়শত চল্লিশ) পিস অবৈধ ইয়াবা ট্যাবলেট। বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্কতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের কারণেই মাদকের এই গোপন চালান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত প্রায় ১০টা নাগাদ, যখন যাত্রী মোঃ সামির (পাসপোর্ট নং A18310312)—পিতা মোঃ গিয়াস উদ্দিন ও মিনা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা আলোনিয়া, ওয়ার্ড নং ০৭, চুনারুঘাট, মুচকান্দি–৩৩২০, হবিগঞ্জ—ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে মালদ্বীপগামী ফ্লাইটে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী চেক-ইন সম্পন্ন করতে এসে লাগেজ স্ক্যানিংয়ের সময় তার ব্যাগে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করেন এভসেক বিভাগের প্রহরী এএসজি আবুল কালাম। তিনি পুনরায় লাগেজ স্ক্যান করানোর পাশাপাশি হাতে-কলমে তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা ভর্তি প্যাকেটগুলো শনাক্ত করেন।
এভসেক সূত্রে জানা যায়, ব্যাগের ভেতরে বিশেষ কৌশলে মোড়ানো অবস্থায় বহু প্যাকেটে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি সংগঠিত আন্তর্জাতিক চক্রের মাদক পরিবহনের অংশ হতে পারে। যাত্রীর রুট—ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর হয়ে মালদ্বীপ—এই চলাচলপথটিও মাদক পাচারকারীদের কাছে বেশ পরিচিত, যা এভিয়েশন নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সতর্ক করে তোলে।
অবৈধ মাদক উদ্ধার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বাধীন কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে (ডিএনসি) বিষয়টি অবহিত করেন। পরে ডিএনসির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে যাত্রী সামিরকে ফ্লাইট থেকে অফলোড করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আটক করে হেফাজতে নেন। জব্দকৃত মাদকদ্রব্যের পরিমাণ, প্যাকেটের বৈশিষ্ট্য, উদ্ধার করার প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যসহ বিস্তারিত একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে যাত্রীর কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ গ্রহণ করা হয়, যাতে মাদকের উৎস, গন্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট চক্রের সম্ভাব্য সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে মাদক চোরাচালানের চেষ্টা বেড়েছে। তবে এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগের আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত কর্মী, গোয়েন্দা নজরদারি এবং কঠোর তল্লাশি কার্যক্রমের ফলে নিয়মিতই বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য, বিশেষ করে মাদকের চালান শনাক্ত হচ্ছে।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, “এএসজি আবুল কালাম অত্যন্ত সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এত বড় পরিমাণ মাদক বিমানবন্দর দিয়ে বাইরে যেতে পারেনি। এই ধরনের সফলতা আমাদের বিমান পরিবহন নিরাপত্তায় জনআস্থা বাড়ায় এবং চোরাচালানকারীদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—বিমানবন্দর ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর ব্যবহার করা এখন অত্যন্ত কঠিন।”
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, আটক যাত্রীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে এটি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে মাদক পরিবহনে জড়িত সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় চক্রগুলোকেও শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে।
এদিকে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের মতে, এমন ঘটনাগুলো দেখায় যে আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদক চক্রগুলো এখনও সক্রিয়। ফলে যাত্রীদের লাগেজ স্ক্যানিং, আচরণ পর্যবেক্ষণ, যাত্রাপথ যাচাই, এবং গোয়েন্দা তথ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর এই সফলতা শুধু একটি বড় মাদক চালান আটক করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং দেশের বিমান পরিবহন খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থাও আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ধরনের সুচিন্তিত ও দক্ষ স্ক্রিনিং ভবিষ্যতে আরও বড় চোরাচালান প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



