ছবি: সংগৃহীত
বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় যখন অনেক অভিনেত্রীর ক্যারিয়ার ৩০-এর পর ধীরে ধীরে পেছনের সারিতে সরে যায়, তখন সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছেন তামান্না ভাটিয়া। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা থেকে শুরু করে বলিউড পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিজের মেধা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছেন তিনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অভিনেত্রীর ভাবনা, জীবনবোধ ও ক্যারিয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে অনেকটাই।
সম্প্রতি ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে তামান্না তার জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন—বয়স, বিয়ে, নারী চরিত্র, এবং চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান। তিনি জানান, একসময় ভাবতেন, তিরিশ পেরোলেই হয়তো অভিনয়জীবন শেষের পথে যাবে, তাই সেই সময়টায় বিয়ে করে সংসারে মন দেবেন। কিন্তু বাস্তবতা তার চিন্তার চেয়েও ভিন্নভাবে বদলে দিয়েছে তার জীবনকে।
তামান্না বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, এখন কাজ শুরু করব, তারপর ৩০-এর পর বিয়ে করব, কারণ তখন মনে হতো তিরিশের পর নারীদের জন্য আর কিছু নেই সিনেমায়। তখন চিত্রনাট্যে আমাদের বয়সের নারীদের নিয়ে গভীর কোনো গল্পই লেখা হতো না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এখন সময় বদলেছে। লেখক, পরিচালক এবং প্রযোজকেরা বুঝতে পেরেছেন—নারীদের চরিত্র মানে শুধু নায়িকা নয়, বরং গল্পের প্রাণ। এখন আমাদের বয়সের নারীদের জন্য দারুণ সব চরিত্র লেখা হচ্ছে। এটা এক বিশাল পরিবর্তন।”
গত বছর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘লাস্ট স্টোরিজ ২’–এর সুজয় ঘোষ পরিচালিত অংশে অভিনয়ের পর থেকে যেন নতুন করে আলোচনায় আসেন তামান্না ভাটিয়া। সেখানে তার অভিনয়ের গভীরতা ও পরিপক্বতা দর্শক ও সমালোচক—দু’জনেরই নজর কেড়েছে।
তারও আগে ‘স্ত্রী ২’–এর জনপ্রিয় গান ‘আজ কি রাত’–এর মাধ্যমে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন, গ্ল্যামার ও পারফরম্যান্স—দুই দিকেই তিনি সমানভাবে দক্ষ।
চলচ্চিত্রপ্রেমীরা বলছেন, তামান্না যেন এখন নিজেকে নতুন করে তৈরি করেছেন—অভিনয়ে, চিন্তায় ও আত্মবিশ্বাসে।
৩৫ বছর বয়সী তামান্না বলেন, “২৭–২৮ বছর বয়সে এসে আমি সত্যিকারের নিজেকে চিনেছি। তখনই বুঝেছিলাম, বয়স কোনো সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এটি আমাকে দিয়েছে অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস। বয়স বাড়া মানে ভয় নয়—এটা একটা সুন্দর রূপান্তর।”
তার মতে, বলিউডে এক সময় নারীদের ৩০ পেরোনো মানেই ক্যারিয়ারের পতন বলে ধরা হতো। কিন্তু এখন সেই ধারণা ভেঙে যাচ্ছে দ্রুত।
তিনি বলেন, “বয়স নিয়ে ভয়টা কেন—এটা আজও বুঝি না! বয়স যেন কোনো রোগ! অথচ বয়স বাড়া তো এক অসাধারণ ব্যাপার। আমি যত বড় হচ্ছি, ততই নিজের ভেতরের শক্তিকে খুঁজে পাচ্ছি।”
তামান্না মনে করেন, সিনেমার গল্প যেমন বদলেছে, তেমনি বদলেছে নারী চরিত্রের মানচিত্রও। এখন নারী চরিত্র শুধু প্রেমিকা বা সহচর নয়—বরং গল্পের চালিকাশক্তি।
তিনি বলেন, “আগে বলিউডে ৩০ পার করা অভিনেত্রীদের সাধারণত সাইড চরিত্রে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন পরিচালকরা আমাদের জন্য জটিল ও গভীর চরিত্র লিখছেন। এই পরিবর্তনটাই আমাদের সবচেয়ে বড় জয়।”
তামান্না আরও বলেন, “আমি গর্ববোধ করি, এমন সময়ে সিনেমায় কাজ করছি, যখন নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করেই অনেক সফল ছবি তৈরি হচ্ছে। দর্শকেরা এখন গল্পের নারীদের মতো শক্তিশালী, আত্মনির্ভর নারীদের দেখতে চায়।”
অভিনয় ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে তামান্না এখন আরও বেছে কাজ করতে চান। তিনি জানান, এখন তিনি এমন গল্পে কাজ করতে চান, যা শুধু জনপ্রিয়তা নয়, অর্থবহ বার্তা বহন করে।
আগামী দিনে তামান্নাকে দেখা যাবে ‘ও রোমি’, ‘ভ্যান—ফোর্স অব দ্য ফরেস্ট’, এবং ‘নো এন্ট্রি ২’–সহ বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমায়। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিতেও তার একাধিক প্রকল্প রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি চাই এমন চরিত্রে অভিনয় করতে, যেগুলো মানুষকে ভাবাবে। এখন আর শুধু গ্ল্যামার নয়, আমি চাই চরিত্রের গভীরতায় বাঁচতে।”
তামান্না সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি সব সময় অনুপ্রেরণা পেয়েছেন পূর্বসূরি নারী শিল্পীদের কাছ থেকে। বিদ্যা বালান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, দীপিকা পাড়ুকোন কিংবা নন্দিতা দাস—যারা সাহস করে ভিন্ন ধরনের চরিত্র বেছে নিয়েছেন। “তাদের মতো নারীরা আমাদের পথ তৈরি করেছেন। এখন আমরা তাদের দেখানো পথে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছি,” বলেন তামান্না।
এক সময় যারা ভাবতেন—ত্রিশ পেরোলেই ক্যারিয়ার শেষ, তাদের ভুল প্রমাণ করছেন তামান্না ভাটিয়া। নিজের প্রতিভা, পরিশ্রম ও ইতিবাচক চিন্তাধারায় তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন, বয়স নয়—আত্মবিশ্বাসই সফলতার মূল চাবিকাঠি।
তামান্নার ভাষায়, “আমার কাছে বয়স মানে নতুন অধ্যায়। আমি এখনও শিখছি, নিজেকে আবিষ্কার করছি। জীবন মানে কেবল সময় নয়, প্রতিটি মুহূর্তে বেড়ে ওঠা।”
এই ভাবনাতেই যেন গড়ে উঠেছে আজকের তামান্না—যিনি ৩০ পেরিয়েও আরও শক্তিশালী, আরও আত্মবিশ্বাসী, এবং নিঃসন্দেহে আরও উজ্জ্বল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



