ছবি: সংগৃহীত
দেশে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি ক্রমেই বাড়ছে, যা রপ্তানি খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। সম্প্রতি আরও সাতটি পণ্য জিআই সনদ পেয়েছে। ফলে দেশে জিআই স্বীকৃত পণ্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬২টিতে। নতুন করে স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি ও হিমসাগর আম, কালীগঞ্জের তোয়ালে, ফরিদপুরের পাট, ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি, মেহেরপুরের মেহেরসাগর কলা এবং নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি।
বাংলাদেশের পাটশিল্পের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ফরিদপুরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুগের পর যুগ ধরে উন্নত মানের পাট উৎপাদনের কারণে জেলা পরিচিতি পেয়েছে ‘সোনালি আঁশের রাজধানী’ হিসেবে। নদ-নদী বেষ্টিত উর্বর অববাহিকা, দোআঁশ মাটি, দক্ষ কৃষক ও প্রজন্মজুড়ে গড়ে ওঠা কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতি ফরিদপুরকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাট উৎপাদন অঞ্চলে পরিণত করেছে। সম্প্রতি ফরিদপুরের পাট ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই সোনালি আঁশ আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন পরিচয় ও মর্যাদা নিয়ে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যখন পাটগাছ দোল খায়, তখন তা কেবল কৃষিকাজে সীমাবদ্ধ থাকে না—বরং এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারার অংশ হয়ে ওঠে। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ বপন, আগাছা দমন, কাটাই, রেটিং ও আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ জুড়ে রয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের সঞ্চিত শ্রম ও দক্ষতা। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলই বিশ্বজুড়ে পরিচিত ফরিদপুরের পাট। পদ্মা, গড়াই, কুমার ও বারাশিয়া নদীর পানিপ্রবাহে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের দোআঁশ মাটি পাটগাছকে করে তোলে লম্বা, আর এর আঁশ হয় উজ্জ্বল, মজবুত ও টেকসই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে আন্তর্জাতিক ক্রেতা—সবাই আলাদা মর্যাদায় দেখেন ফরিদপুরের পাটকে। ব্রিটিশ আমল থেকেই নওপাড়া, কামারখালী, বোয়ালমারী ঘাট হয়ে নৌকায় ভরে পাট যেত কলকাতার বিখ্যাত জুট মিলগুলোতে। তখনই ‘ফরিদপুর পাট’ বাজারে ছিল আলাদা একটি ব্র্যান্ড। আজও সেই ঐতিহ্য বহন করছেন এখানকার কৃষকরা।
বাংলাদেশে মোট পাট উৎপাদনের বড় অংশই আসে ফরিদপুর থেকে। ধান, গম বা সবজি উৎপাদনের প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও পাট এখনো এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল। এই মৌসুমে পাট আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। যার বাজারমূল্য দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি।
খরচ বাড়ছে, শ্রমিক সংকট, প্রযুক্তির অভাব। যদিও পাট চাষ লাভজনক, তবে কৃষকরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। উন্নত জাতের বীজের সংকট, রেটিংয়ের জন্য উপযুক্ত জলাশয়ের অভাব, শ্রমিক সংকট, সংরক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



