
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী শিক্ষার মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো নামাজ। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পরিবার ও সন্তানের ওপর নামাজের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, “তুমি তোমার পরিবারকে নামাজের নির্দেশ দাও এবং নিজেও এতে অবিচল থাকো।” (সুরা ত্ব-হা, আয়াত ১৩২) এই আয়াত প্রমাণ করে, সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নামাজের সঙ্গে পরিচিত করা তাদের ইসলামী শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নামাজ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্যও প্রয়োজনীয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।” (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত ৬) তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সঠিক পথে পরিচালনা করা, নামাজের প্রতি অভ্যস্ত করা মাতা-পিতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
মুমিনের দোয়া হলো, পরিবার-সন্তানদের দ্বিনের পথে বড় করা। আল্লাহর শেখানো দোয়া অনুযায়ী, “হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের চোখের শীতলতা দাও এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানাও।” (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪) সন্তানেরা যেন মুত্তাকিদের অনুসারী হয়, এজন্য তাদের মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসা এবং নামাজে অভ্যস্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো শিশুদের মসজিদে আসতে নিষেধ করেননি। বরং কোলে বা কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করেছেন। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, “আমি নবী (সা.)-কে নাতনি উমামাহকে কাঁধে বহন করে নামাজ পড়তে দেখেছি। রুকুতে গেলে নামিয়ে দিতেন, দাঁড়ালে আবার কাঁধে নিতেন।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ১৮২) এটি প্রমাণ করে, শিশুদের উপস্থিতি নামাজের জন্য কোনো বাধা নয়; বরং ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী এটি স্বাভাবিক।
নবী (সা.) শিশুদের প্রতি মমতা দেখিয়ে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। বুখারিতে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, “আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত সংক্ষিপ্ত করি। কারণ শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করি না।” (বুখারি, হাদিস ৬৭৫) এটি ইঙ্গিত দেয়, শিশুদের মসজিদে উপস্থিতি বৈধ এবং ইমাম ও মুসল্লিদের সহনশীল হওয়া উচিত।
একবার নবী (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন হাসান ও হুসাইন হোঁচট খেয়ে এলেন। নবী (সা.) মিম্বার থেকে নেমে তাদের কোলে নেন এবং বলেন, “আল্লাহ সত্য বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের সন্তানরা পরীক্ষা।” (বায়হাকি, হাদিস ৫৮১৯) এটি প্রমাণ করে, শিশুর উপস্থিতি নবীর কাছে প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক ছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের মর্যাদা দেয় না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিজি, হাদিস ১৯২১) সুতরাং শিশুদের প্রতি বিরক্ত না হয়ে মমতা প্রদর্শন করা আবশ্যক। অভিভাবকের দায়িত্ব হলো ধীরে ধীরে শিশুদের শৃঙ্খলিত করা, আর মুসল্লিদের কর্তব্য হলো সহনশীলতা ও দয়া প্রদর্শন করা। শিশুদের আজকের উপস্থিতিই আগামী দিনের মসজিদভরা ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখে।
শিশুদের নামাজে অভ্যস্ত করা কেবল ধর্মীয় নির্দেশ নয়; এটি তাদের চরিত্র ও দ্বিনের শিক্ষা গঠনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছোটবেলা থেকে মসজিদের পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, বাবা-মায়ের নেতৃত্বে নামাজের অভ্যাস এবং মুসল্লিদের সহনশীলতা শিশুদের ইসলামী জীবনধারা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পরিবার ও সমাজকে শিশুদের নামাজে অভ্যস্ত করার জন্য সচেষ্ট থাকা আবশ্যক।
বাংলাবার্তা/এমএইচ