ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে তাঁর অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এ অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গুজব-বিভ্রান্তিতে কান না দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে দলের নেতাকর্মী, অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী ও অনুরাগী-সমর্থকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তাঁর সুস্থতা কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করছেন তাঁরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে সরকার।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা ও পরামর্শ দিতে চীন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম ঢাকায় এসেছে।
এই টিম গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এই বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরাও রয়েছেন। লন্ডন থেকে তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখছেন এবং দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগে সমন্বয় করছেন।
গতকাল সোমবার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ম্যাডামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। কেউ এতে বিভ্রান্ত হবেন না।’
একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় কায়মনোবাক্যে মহান রাব্বুল আল-আমিনের কাছে দোয়া করতে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান গতকাল দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) গভীর রাত থেকে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে চলে গেছেন।
তিনি ফাইট করছেন আমাদের মাঝে ফিরে আসার জন্য। এখনো অবস্থা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল আছে। বলার মতো কোনো কন্ডিশনে এখনো তিনি আসেননি। সারা জাতির কাছে দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আজম খান বলেন, ‘বলা যায় খুব ডিপ কন্ডিশনে আছেন। ডিপ কন্ডিশনের ব্যাখ্যাটা আমি আপনাদের কাছে দিতে চাই না। এটিকে আপনারা ভেন্টিলেশনও বলতে পারেন, ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনও বলতে পারেন। ডাক্তাররা ক্লান্তিহীনভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর আগে আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের ডাক্তাররা চিকিৎসায় ছিলেন। এখন চায়নার ডাক্তাররাও ইনভলভ হয়েছেন। এই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন থেকে ম্যাডাম যাতে আমাদের মাঝে পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন—এটাই আল্লাহর কাছে একমাত্র চাওয়া।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিসিইউ থেকে আইসিইউ, এরপর ভেন্টিলেশন বা লাইফ সাপোর্ট, যাই বলেন। আমি এগুলোর বাইরে বলব যে ম্যাডাম খুব ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। আমি এর বাইরে অন্য কিছু বলতে চাই না। শুধু ম্যাডামের জন্য জাতির কাছে দোয়া চাই।’
আজম খানের এই বক্তব্যের পর গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়েছে। সবার মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বেড়ে যায়।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই খালেদা জিয়ার। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হলেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাশাপাশি দেশবাসীর মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
গতকাল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সিসিইউতে আগের মতোই চিকিৎসাধীন আছেন। আগে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল, গতকাল ও গত পরশু যেমন ছিল, আজও তেমনিভাবেই চিকিৎসা চলছে। এর বাইরে আর কোনো নতুন আপডেট নেই।’
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতে কেউ যেন কান না দেয়। আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ তাঁকে খুব দ্রুত আরোগ্য দান করুন, সুস্থ করে তুলুন এবং আবারও এ দেশের মানুষের কাছে, জনগণের কাছে তাঁকে ফিরিয়ে দিন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি শুধু বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেত্রীও নন। আজ সারা দেশের মানুষ, পেশাজীবী, সুধীসমাজ, ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ও কৃষক সবাই তাঁর জন্য দোয়া করছেন। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে গোটা জাতি আজ এক বেদনাবিধুর অবস্থায় রয়েছে।’
খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানান, চীনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও করণীয় নির্ধারণে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। চিকিৎসার জন্য কী কী জরুরি, কোন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত মূল্যায়ন করা হবে।
তবে এর পরই দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন সিসিইউতেই আছেন। এমনকি আজম খানও ভেন্টিলেশনের কথা সরাসরি বলেননি। তাই কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে আবারও বলা হয়, চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মেডিক্যাল টিমের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনই শুধুমাত্র কথা বলবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করেছেন বাংলাদেশের ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া, ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম প্রমুখ।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও সুস্থতা কামনায় গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবেও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে প্রেস ক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী এ আদেশে স্বাক্ষর করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১-এর ২(ক) ধারার আওতায় খালেদা জিয়াকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



