ছবি: সংগৃহীত
জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, বিএনপি এই সব অঙ্গীকার রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, 'তবে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল পেয়ে যা ইচ্ছে তাই আদায় করে নিতে চায়, কিংবা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে, সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।'
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, 'যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চেয়েছিল; যারা জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল; যারা দেশের শৌর্য, বীর্য, সাহস ও সম্মানের প্রতীক সেনাবাহিনীর গৌরবকে ভূলুণ্ঠিত করতে চেয়েছিল; ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের পরাজয় ঘটেছে।'
তিনি বলেন, 'বিডিআর পিলখানায় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিল, জনগণের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের, ২০২৪ ছিল দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।'
জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে 'জনগণ কিন্তু রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজপথে নেমে এসেছিলেন। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, অবশ্যই কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা রাজনৈতিক দরকষাকষি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য হাজারো-লাখো মানুষ রাজপথে জীবন বিলিয়ে দেয়নি।'
তিনি বলেন, 'জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত হচ্ছে, তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কার্যত গণতন্ত্রকামী জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।'
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, 'বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি-ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জনগণের মুখোমুখি হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার, নিজ নিজ দলীয় সমর্থক, নেতাকর্মীদের বাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছেন। এই লাখো-কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।'
২০২৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষা-দীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে তথাকথিত গণভোট নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা সবচেয়ে বেশি জরুরি।'
তিনি বলেন, 'পলাতক লুটেরা বাহিনীর বেপরোয়া লুটপাটের পর দেশের ব্যাংকিংখাত এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের কমপক্ষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জনগণকে ভয় দেখতে চাই না, তবে আমাদেরকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে উঠছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়।'
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকার। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নানা শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে।'
তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ করা, অপরদিকে পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা। পলাতক স্বৈরাচারির সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে বলে আমি মনে করি।'
তিনি বলেন, 'গণভোটের আড়ালে পতিত, পরাজিত, পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, আমি এ ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই। স্বল্প মেয়াদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণ সকল ক্ষেত্রে সার্বিক সফলতা আশা করে না। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বও নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে? নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার দেবে।'
উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে দেশটির নাম 'ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া' লেখা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সংবিধানে লেখা থাকলেই সব কিছু নিশ্চিত হয়ে যায় না। সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে মুনাফেকি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।'
অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে না করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্যের শেষ অংশে তিনি বলেন, 'দিল্লি নয় পিণ্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ'।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



