ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে নানা আয়োজনে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) পালন করা হয়েছে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। এ দিনটিকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগরে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী, দোয়া মাহফিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো।
দলটির নেতারা এই দিবসের তাৎপর্য স্মরণ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল জাতির ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো দিন। যখন সমগ্র জাতি অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, তখন সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লব জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে দেশপ্রেম ও ঐক্যের অনন্য নজির স্থাপন করেছিল।
তারা বলেন, ইতিহাস সাক্ষী—যখনই জাতি বিপদের মুখে পড়ে, তখন জনগণের ঐক্যই মুক্তির পথ দেখায়। আজও দেশের সংকটকালে সেই একই ঐক্যের প্রয়োজন।
“ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ পড়বে ভয়াবহ সংকটে”
বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বিকল্প নেই। অন্যথায় দেশ “মহাবিপর্যয়ের” মুখে পড়বে।
নেতারা বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান একই সূত্রে গাঁথা—সবই জনগণের মুক্তি, অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। তাই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না ফিরলে দেশ আবারও গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।
হালুয়াঘাটে বিএনপি নেতাদের কঠোর সমালোচনা
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে সকালে শোভাযাত্রা ও বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করাই একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য। এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের ঢল দেখে ভীত হয়ে পড়েছে, তাই তারা নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। তার মতে, “জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।”
এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত উল্লাহ কালাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ প্রমুখ। পরে ডিএস আলিম মাদ্রাসা মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়, যা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন
রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হন। বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সহসভাপতি ওয়ালিউল হক রানা, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ অনেকে। তারা বলেন, জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে রাস্তায় নেমেছে—এই জোয়ার কোনো দমননীতিতে থামানো যাবে না।
খুলনায় দ্বিমুখী কর্মসূচি
খুলনা নগরীতে দুই গ্রুপের বিএনপি পৃথকভাবে দিবসটি পালন করে। কেডিএ এভিনিউয়ের তেঁতুলতলা মোড়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। এতে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা।
অন্যদিকে, শিববাড়ী মোড়ে পৃথক সমাবেশ করে মহানগর বিএনপির আরেকটি অংশ। এস এম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। উভয় পক্ষই বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ৭ নভেম্বরের চেতনা নতুন করে প্রেরণা জোগাচ্ছে।
বরিশালে জনসমাবেশ ও গণআলোচনা
বরিশাল সদর রোডে মহানগর ও জেলা বিএনপি যৌথভাবে বিশাল আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল সদর আসনের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক।
সরোয়ার বলেন, “এই সরকারের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা। তারা নির্বাচনকে ভয় পায় কারণ জনগণ জেগে উঠেছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণই হবে পরিবর্তনের বার্তাবাহক।”
নারায়ণগঞ্জে র্যালি ও জনসমাবেশ
সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বর্ণাঢ্য র্যালি করেন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনি বলেন, “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—সংকটের সময় জনগণের ঐক্যই মুক্তির চাবিকাঠি।”
এতে অংশ নেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, পৌর বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মেম্বারসহ স্থানীয় নেতারা।
এদিকে, জেলা যুবদল বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে শোভাযাত্রা করে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে শত শত তরুণ নেতাকর্মী অংশ নেন। রনি বলেন, “জিয়াউর রহমানের ৭ নভেম্বরের বিপ্লবই দেশে গণতন্ত্রের বীজ রোপণ করেছিল। আজ তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় লড়ছি।”
সারাদেশে কর্মসূচির বর্ণচ্ছটা
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে, শরীয়তপুরের ডামুড্যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে, পটুয়াখালীর গলাচিপায়, কুমিল্লার দেবিদ্বারে, নোয়াখালীর হাতিয়া ও সোনাইমুড়ীতে, পাবনার ঈশ্বরদীতে, নড়াইলের লোহাগড়ায়, যশোরের শার্শায়, রংপুরের পীরগঞ্জে, নেত্রকোনার মদনে, চাঁদপুরের মতলব উত্তরে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও নাগরপুরে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মুন্সীগঞ্জে ব্যতিক্রম সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও ছিল এই দিবসের অংশ হিসেবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫০০-রও বেশি মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পায়।
এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো বেলা সাড়ে ১১টায় বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা করে। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম হায়দার আলী।
“জনগণের ঐক্যই মুক্তির পথ”
দিবসটির সকল কর্মসূচির মূল বার্তা ছিল এক—সংকটকালে জনগণের ঐক্যই জাতিকে রক্ষা করতে পারে। বিএনপি নেতারা বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ দেশ আবারও গণতন্ত্রহীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। তাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি নতুন ষড়যন্ত্র হয় বা জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তা হবে দেশের জন্য “মহাবিপর্যয়ের” সূচনা।
তাদের ভাষায়, “যখনই জাতি সংকটে পড়ে, জনগণই মুক্তির পথ দেখায়—এটাই ৭ নভেম্বরের শিক্ষা।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



