ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়েছে, যা কখনোই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা যাবে না এবং সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে নাগরিককে নজরদারি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবার মানবিক উন্নয়ন, রেগুলেশন এবং রাষ্ট্রীয় সার্ভেইলেন্স কাঠামোতে গঠনমূলক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদে সংশোধিত অধ্যাদেশ পাস হয়। পরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
নতুন অধ্যাদেশে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা কখনোই বন্ধ করা যাবে না এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালের বিতর্কিত সংশোধনের কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির ক্ষমতা ও কার্যপরিধির মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা হয়েছে। আগে সব লাইসেন্স ইস্যুর অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে হলেও, এখন জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু লাইসেন্স মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডির ভিত্তিতে অনুমোদনের দায়িত্ব পালন করবে। অন্য সব লাইসেন্স ইস্যু করার এখতিয়ার পুনরায় বিটিআরসির হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে একটি ‘জবাবদিহিতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লাইসেন্সের আবেদন থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সময় কমানো হয়েছে। এছাড়া আগের আইনে বর্ণিত উচ্চ জরিমানা, রিকারিং জরিমানা কমানো হয়েছে, যা টেলিযোগাযোগ খাত বিনিয়োগবান্ধব করবে। এখন থেকে প্রতি চার মাসে বিটিআরসিকে গণশুনানি করতে হবে, তার ফলোআপ ওয়েবসাইটে রাখতে হবে এবং কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রোধেও বিধান রয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো নাগরিককে নজরদারি বা অযথা হয়রানি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে। ‘স্পিচ অফেন’ সম্পর্কিত নিবর্তনমূলক ধারা পরিবর্তন করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ধারাবাহিকতায় কেবল সহিংসতার আহ্বানকেই অপরাধের আওতাভুক্ত রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে আপিল এবং সালিশ বিষয়ক ধারা রাখা হয়েছে। ‘সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট প্রতিষ্ঠা’ করা হয়েছে।
আইনে আইনি ভিত্তিতে ইন্টারসেপশনের সংজ্ঞা ও পরিধি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কেবলমাত্র বিচারিক ও জরুরি পরিস্থিতিতে আইনানুগ ইন্টারসেপশনের প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সেন্টার ফর ইনফর্মেশন সাপোর্ট’ গঠন করা হয়েছে, যা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা অধ্যাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হবে। জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, জরুরি প্রাণরক্ষার প্রয়োজন, বিচারিক বা তদন্ত কার্যক্রম এবং আন্তঃসীমান্ত সংক্রান্ত কাজে আইনানুগ ইন্টারসেপশন কেবল সুনির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী অনুসরণ করে করা যাবে। এই কার্যক্রম কেবল আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংস্থা দ্বারা এবং তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে সীমিতভাবে পরিচালিত হবে।
‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট (সিআইএস)’ মাধ্যমে রোল বেজড অ্যাকসেস কন্ট্রোল এবং আধা-বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কোনো ইন্টারসেপশন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। নতুন গঠিত সিআইএস নিজে কোনো ইন্টারসেপশন পরিচালনা করতে পারবে না, এটি শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। ‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট প্রতিষ্ঠা’ সংশোধনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আইনানুগ ইন্টারসেপশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আধা-বিচারিক কাউন্সিল এবং সংসদীয় তদারকির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বেআইনি ইন্টারসেপশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার সুযোগ কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
আধাবিচারিক কাউন্সিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (সভাপতি), প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইনানুগ ইন্টারসেপশন বিষয়ে প্রতি বছর একটি জাতীয় বার্ষিক প্রতিবেদন জনগণের নিকট প্রকাশ করবে, যাতে ইন্টারসেপশনের ক্ষেত্রসমূহসহ বর্ণিত থাকবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতি বছর কার্যক্রম বাজেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যাচাই করবে। এছাড়া ইমেজ এবং ভয়েস প্রোটেকশন, সিম ডেটা এবং ডিভাইস ডেটা প্রোটেকশনের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীন সব ব্যবস্থাপনা জাতিসংঘ, আইটিইউসহ আন্তর্জাতিক উত্তম অনুশীলনের সহিত সামঞ্জস্য থাকবে। অধ্যাদেশটি ২০ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগত অনুমোদন পায়। এরপর স্বরাষ্ট্র, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বুধবারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তোলা হয়। সেখানে তা চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



