
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি বিনোদন অঙ্গনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুরূপী অভিনেতাদের মধ্যে একজন মোশাররফ করিম। এবার তিনি হাজির হচ্ছেন একেবারেই নতুন, চমকপ্রদ ও ভয়ংকর এক রূপে, যা তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে আগে কখনো দেখা যায়নি। নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দারের আসন্ন সিনেমা ‘ইনসাফ’-এর দ্বিতীয় পোস্টারে পাওয়া গেল এই ভিন্নধর্মী ও রক্তাক্ত অবতারের আভাস, যা ইতোমধ্যেই দর্শকমহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পোস্টারে দেখা যায়, মোশাররফ করিম চোখে সানগ্লাস, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, পরনে ধূসর রঙের পাঞ্জাবির মতো লম্বা পোশাক, যার গা জুড়ে লেগে আছে রক্তের ছিটেফোঁটা। ডান হাতে ধরা এক বিশাল কুড়াল, আর ঘাড়ে ঝুলছে থেটোস্কোপ। তাঁর দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে তীব্র প্রতিশোধের আগুন। এসবই যেন এক ভয়ঙ্কর গল্পের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে রক্ত, বিচার আর ন্যায়বোধই মুখ্য উপাদান।
রোববার (৪ মে) সন্ধ্যায় সিনেমার দ্বিতীয় পোস্টারটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার লেখেন, “এই ডাক্তার রোগ নয়, পাপ সারায়! রক্তই তার ভাষা, ইনসাফই তার শপথ!” এই সংক্ষিপ্ত বাক্যেই স্পষ্ট হয়, সিনেমাটিতে থাকবে প্রতিশোধ আর ন্যায়বিচারের দুর্দান্ত মিশেল। মোশাররফ করিম যে চরিত্রে অভিনয় করছেন, সেটি হয়তো একজন ডাক্তার, তবে তাঁর পথে রয়েছে এক ভয়ানক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছিল সিনেমাটির প্রথম পোস্টার, যেখানে দেখা যায় শরীফুল রাজকে—তিনি হাতে একটি রক্তাক্ত কুড়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠোঁটে রহস্যময় হাসি। সেই পোস্টারেও প্রতিশোধ, হিংসা আর রহস্যের আভাস ছিল স্পষ্ট। দুই পোস্টার একত্র করলে বোঝা যায়, ‘ইনসাফ’ শুধুই একটি অ্যাকশন থ্রিলার নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে এক ডার্ক জার্নি—যেখানে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচিত হতে পারে।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন তাসনিয়া ফারিণ, যিনি এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে প্রধান নায়িকা হিসেবে হাজির হচ্ছেন। ছোটপর্দায় বেশ সাফল্য পাওয়া এই অভিনেত্রীর বড়পর্দায় এই রূপান্তর নিয়েও আগ্রহ রয়েছে ভক্তদের মধ্যে। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে তিনি কতটা জায়গা করে নিতে পারেন, সেটিও এখন একটি বড় প্রশ্ন।
এদিকে, ‘ইনসাফ’-এর নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার এর আগে কলকাতার জনপ্রিয় তারকা জিৎকে নিয়ে ‘মানুষ’ নামক একটি সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন। সেটি ছিল তার চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘ইনসাফ’ হতে যাচ্ছে তার প্রথম চলচ্চিত্র, যেখানে দেশের নিজস্ব প্রেক্ষাপট, ভাষা ও সমাজ-রাজনীতির ছায়া প্রতিফলিত হতে পারে।
সিনেমাটির চিত্রনাট্য, দৃশ্যায়ন ও প্রযোজনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। ‘ইনসাফ’-এর প্রযোজনায় রয়েছে তিতাস কথাচিত্র এবং টিওটি ফিল্মস, যারা এর আগেও কিছু গুণগত মানসম্পন্ন কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
‘ইনসাফ’ সিনেমার শুটিং শুরু হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এবং বর্তমানে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। নির্মাতা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে দেশব্যাপী। সিনেমার ট্রেলার এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবে পোস্টার ও চরিত্র উন্মোচনের পর থেকেই দর্শকের আগ্রহ ও প্রত্যাশার পারদ বাড়ছে।
বিনোদন বিশ্লেষকদের মতে, মোশাররফ করিমের এই ভয়ংকর চরিত্রচিত্রণ এবং নতুন ধরনের লুক বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারে। বিশেষত, এই সময়টাতে যখন দর্শকরা অ্যাকশন, থ্রিলার ও বাস্তবধর্মী গল্পে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তখন ‘ইনসাফ’ হতে পারে সেই প্রত্যাশা পূরণের একটি দারুণ সুযোগ।
সব মিলিয়ে, ‘ইনসাফ’ এখন শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং হয়ে উঠেছে একটি বহুল প্রতীক্ষিত বিনোদনমূলক ও নৈতিক বার্তা সমৃদ্ধ কাজ, যা নিয়ে দর্শকমহলে উত্তেজনার কমতি নেই। মোশাররফ করিমের ভিন্ন রূপ তার অভিনয় জীবনের অন্যতম আলোচিত মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে বলেও অনেকেই মনে করছেন।
এই ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর ভিড়ে ‘ইনসাফ’ আলাদা হয়ে ওঠে কিনা, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ