ছবি: সংগৃহীত
দেশব্যাপী করদাতাদের আবেদন, ব্যবসায়ীদের অনুরোধ, চলমান অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থার চাপ এবং নতুন আয়কর আইনের বিধান কার্যকর করার বাস্তবতায় ২০২৫–২৬ করবর্ষের ব্যক্তিগত করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা এক মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নিয়ম অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় প্রতিবছর ৩০ নভেম্বর হলেও এবার তা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সময় বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন আগামী সপ্তাহেই জারি হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় এক মাস অতিরিক্ত সময় পেলে করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল আরও সহজ হবে এবং দেশের সামগ্রিক রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে বলে সরকারি সূত্র আশা করছে।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী চলতি করবর্ষে (২০২৫–২৬) কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য সব শ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। কিন্তু পেশাজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ করদাতা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন। বিশেষত, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ই-রিটার্ন দাখিলের নতুন পদ্ধতিতে অনেক করদাতা এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত নন। ফলে সময় বাড়ানোর জোরালো দাবি আসে এবং এনবিআর সেই আবেদনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখায়।
অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনার পর রাজস্ব প্রশাসনে সিদ্ধান্ত হয়, করদাতাদের সুবিধা বিবেচনায় সময় বাড়ানো যৌক্তিক। তাই ৩০ নভেম্বরের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কর কর্মকর্তাদের মতে, সময় বৃদ্ধি করলে নতুন ই-রিটার্ন সিস্টেম পরীক্ষামূলক থেকে নিয়মিতভাবে চালু করার একটি বড় সুযোগ তৈরি হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২০২৫–২৬ করবর্ষে ইতোমধ্যে অনলাইনে ১০ লাখের বেশি করদাতা ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি, যা অনলাইন সিস্টেম জনপ্রিয় হওয়ার একটি বড় প্রমাণ।
২০২৫ সালের ৪ আগস্ট অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ই-রিটার্ন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেই সময়েই জানানো হয় যে, ধীরে ধীরে সমস্ত করদাতাকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনা হবে।
এ বছর এনবিআর একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে সাধারণ ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিলকে বাধ্যতামূলক করেছে। তবে ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ ব্যক্তি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি এবং মৃত করদাতার আইনি প্রতিনিধির জন্য ব্যতিক্রমী সুযোগ রাখা হয়েছে।
যারা এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তারাও ইচ্ছা করলে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। অর্থাৎ ই-রিটার্ন সবার জন্য উন্মুক্ত, এবং এর সহজলভ্যতা করদাতাদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
বিদেশে কর্মরত বা প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি করদাতারাও অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এনবিআর জানিয়েছে, পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা উল্লেখ করে [email protected] এ আবেদন করলে করদাতার ই-মেইলে OTP এবং রেজিস্ট্রেশন লিংক পাঠানো হয়। এরপর তারা সহজেই ই-রিটার্ন সিস্টেমে প্রবেশ করে রিটার্ন জমা দিতে পারেন।
এই ব্যবস্থাটি প্রবাসী করদাতাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ বা বিদেশ—কোথাও বসেই রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
অনলাইন ই-রিটার্ন সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হয় না। করদাতাকে কেবল তাঁর আয়, ব্যয়, সম্পদ এবং দায় সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে হয়। সিস্টেম সেই তথ্য যাচাই করে তাৎক্ষণিকভাবে Acknowledgement Slip এবং আয়কর সনদ প্রদান করে।
এই প্রক্রিয়া সময় বাঁচায়, জটিলতা কমায় এবং ট্যাক্স অফিসে যাতায়াতের ঝামেলাও দূর করে দেয়।
করদাতাদের সুবিধার জন্য এনবিআর দেশে প্রথমবারের মতো একটি পৃথক কল সেন্টার চালু করেছে—০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে কল করেই করদাতারা তাৎক্ষণিক সহায়তা পাচ্ছেন।
এ ছাড়া www.etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটের eTax Service বিভাগে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিটি কর অঞ্চলে স্থাপিত ই-রিটার্ন হেল্প ডেস্কও সরাসরি সাপোর্ট দিচ্ছে, যেখানে করদাতারা কম্পিউটার ব্যবহার, ফর্ম পূরণ, OTP সমস্যাসহ যেকোনো টেকনিক্যাল বিষয় সমাধানের সুযোগ পাচ্ছেন।
কর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় বাড়ানো হলে আরও কয়েক লাখ করদাতা ই-রিটার্নের আওতায় আসবেন। এতে করদাতার অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, ডিজিটাল কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা এবং সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব অর্জন—সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
একই সঙ্গে নতুন আয়কর আইন, ২০২৩–এর বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে এনবিআরকে আরও কিছুটা সময় দেবে, যা প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয়।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



