ছবি: সংগৃহীত
কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না রাজস্ব আহরণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সামগ্রিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরছে না; উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে, আর সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় বাড়তি চাপের মুখে পড়ছে। ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে বারবার নতুন ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
গত এক বছরে সরকারের মোট ঋণ বেড়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৯ লাখ ৪৯ হাজার ১৮১ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ (ব্যাংক ও নন-ব্যাংক খাত মিলিয়ে) প্রায় ১১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছর, ২০২৪ সালের জুনে মোট ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে এই অঙ্ক ছিল ২৩ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের ঋণ বুলেটিন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত মাসে প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। সরকারি ও সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বৈদেশিক ঋণ গত ১৩ বছরে তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হলো উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো থেকে পাওয়া বাজেট সহায়তা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় প্রকল্পের জন্য প্রাপ্ত অর্থায়ন। এর পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতেও সরকারকে বেশি হারে ঋণ নিতে হচ্ছে।
অবশ্য ঋণ নিয়ে সরকার কিছুটা সতর্ক আছে মর্মে উপদেষ্টার বক্তব্যে তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এখন বিদেশি ঋণ নেওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক আছি। চট করে ঋণ নেওয়া হবে না। কারণ ঋণের চাপ জনগণের ওপর পড়বে। এখন বাজেট সাপোর্ট হিসেবেও ঋণ নেব না। নিজেরাই চেষ্টা করব রাজস্ব আহরণ বাড়াতে। তিনি আরও বলেন, ঋণ নিতে গিয়ে নানা শর্ত পালন করতে গিয়ে নিজস্ব স্বাধীনতা থাকছে না। চীনের ঋণ নিয়ে আমরা সতর্ক। কারণ চীনের ঋণ নিয়ে আফ্রিকা সমস্যায় পড়ছে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) ৫ থেকে ৬টি ঋণ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছি।
অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী জানান, ঋণ ডিডিপির অনুপাতে উদ্বেগজনক না হলেও পরিশোধের ক্ষমতা কতটুকু সেটি বিবেচনা করতে হবে। আমরা যদি ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার না করে অপচয় করি, সেক্ষেত্রে পরিশোধের সক্ষমতা থাকবে না। আর ঋণ সঠিক ব্যবহার না হলে সেটি উদ্বেগজনক হবে। কারণ বাজেটের একটি অংশ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। তিনি আরও বলেন, এজন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সিলেক্টিভ ও সতর্ক হতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, ঋণের অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসছে পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্রসহ অন্য খাত থেকে নেওয়া হয়েছে চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা যে ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে, সেটি জিডিপির ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
ঋণসংক্রান্ত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপি অনুপাত এখনো মধ্যম পর্যায়ে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘সুরক্ষিত সীমা’র মধ্যে রয়েছে। তবে কিছু অর্থনৈতিক সূচক এখন সতর্কতার সঙ্কেত দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে ঋণ টেকসই রাখার ক্ষেত্রে বুলেটিনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ ঋণ ব্যবস্থাপনা, নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের কঠোর যাচাই, বাস্তবায়ন দক্ষতার উন্নয়ন, রাজস্ব আহরণের ত্বরান্বিত ব্যবস্থা এবং রপ্তানি আয় সম্প্রসারণ ও বৈচিত্র্যকরণের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ প্রয়োজন।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



