ছবি: সংগৃহীত
২০২৬ সালে হজযাত্রীদের সার্বিক খরচ কমাতে বিমান টিকিটের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। হজযাত্রীদের আর্থিক চাপ কমানোর সরকারি নীতির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে এনবিআর আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন গুরুত্বপূর্ণ
হজযাত্রীদের বিমান টিকিটে বহুবছর ধরেই দুই ধরনের শুল্ক আরোপিত হয়ে আসছিল—
-
যাওয়া (ঢাকা–জেদ্দা/মদিনা) টিকিটে: ২,৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক
-
ফেরত (জেদ্দা/মদিনা–ঢাকা) টিকিটে: ২,৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক
এর ফলে একজন হজযাত্রীকে মোট ৫,০০০ টাকা অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হতো। পাশাপাশি টিকিটের ওপর ভ্যাট যুক্ত থাকায় মোট খরচ আরও বাড়ত। কিন্তু এবার শুধুমাত্র আবগারি শুল্ক নয়, টিকিটের ওপর আরোপিত সমস্ত ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাই বিমানের টিকিট-সংক্রান্ত ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি মিলবে।
এনবিআরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়। অতীতে হজযাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় সরকার বিভিন্ন সময় এই শুল্ক মওকুফ করেছে। সাধারণত এয়ারলাইনসগুলো টিকিট বিক্রির সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ কর বা আবগারি শুল্ক সংগ্রহ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। তবে হজ মৌসুমে বিশেষ বিবেচনায় বারবার এ শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালেও সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে।
হজ ব্যয় কমছে ২০২৬ সালে
২০২৬ সালের হজ প্যাকেজ এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। নতুন প্যাকেজ অনুযায়ী—
-
ন্যূনতম ব্যয়: ৪,৬৭,১৬৭ টাকা
এটি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম, কারণ বিমানভাড়া এবার কমানো হয়েছে এবং টিকিটে শুল্ক-ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ব্যয় কমানোর প্রভাব ফেলবে।
চলতি বছরের (২০২৫) সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ছিল। কিন্তু ২০২৬ সালের জন্য তিনটি নতুন প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, যাতে ভিন্ন আয়–সক্ষমতার মানুষরা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নিতে পারেন।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, সরকার হজকে আরও সাশ্রয়ী করতে একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে বিমানভাড়া হ্রাস, প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণ এবং এনবিআরের শুল্ক–ভ্যাট প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত হজযাত্রীদের অর্থনৈতিক সাশ্রয় নিশ্চিত করবে।
গত বছরের প্যাকেজ তুলনা
২০২৫ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায়—
-
প্যাকেজ–১: ৪,৭৮,২৪২ টাকা
-
প্যাকেজ–২: ৫,৭৫,৬৮০ টাকা
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪,৮৩,১৫৬ টাকা, যা এজেন্সিগুলোকে তাদের প্যাকেজ তৈরি করতে নির্দেশনা হিসেবে দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের নতুন প্যাকেজ ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমে আসছে, বিশেষ করে বিমান টিকিটের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের প্রভাব এতে স্পষ্ট।
হজযাত্রীদের জন্য সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগ
প্রতি বছরই সরকারের বিভিন্ন দফতর—বিশেষ করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও এনবিআর—মিলে হজযাত্রীদের ভ্রমণ ও আবাসন সংক্রান্ত খরচ কমাতে নীতিগত উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এর অংশ হিসেবে—
-
বিমানভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা
-
সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমন্বয়
-
টিকিটে শুল্ক-ভ্যাট মওকুফ
-
সেবা সহজীকরণ
এগুলোকে নিয়মিতভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।
২০২৬ সালেও একই ধারা বজায় রাখায় হজযাত্রীরা তুলনামূলক স্বস্তিতে হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, এবারের সিদ্ধান্ত যাত্রীদের আর্থিক চাপ কমানোর পাশাপাশি হজ ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়াবে।
বাংলাবার্তা/এসজে
.png)
.png)
.png)



