ছবি: বাংলা বার্তা
চট্টগ্রামে পানিবন্দি নগরীর কয়েক হাজার পরিবার। এরইমধ্যে রোববার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে বৃষ্টিতে বেড়েছে জলাবদ্ধতা। অসংখ্য সড়কে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। পানিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের অন্তত আড়াইশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অপরদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে মাইকিং। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসকারীদের জন্য জন্য খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।
নগরীতে টানা ছয়দিন ধরে কখনও থেমে থেমে আবার কখনও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির ষষ্ঠ দিনে রবিবার সকাল থেকে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরও তিনদিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসিন্দা রাকিবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে এ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি। বিশেষ করে কলোনিগুলোর বাসিন্দারা জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে আছেন। পাশাপাশি বেশিরভাগ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। এখানে আগেও বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হতো। তবে এবার বেশি ডুবেছে। কেননা এখানকার অনেক সড়কের উন্নয়ন কাজ হয়েছে গত কয়েক বছরে। এ কারণে সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। তবে সেভাবে উঁচু করার সুযোগ হয়নি কলোনি এবং বাসাবাড়িগুলো। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
এদিকে পানিবন্দি অনেক পরিবারে ডুবে গেছে রান্নার চুলাও। এসব পরিবারে রান্না হচ্ছে না তিন দিন ধরে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যারা কলোনিতে বাস করছেন তারা জলাবদ্ধতায় বেশি কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে এখনও খাবার সহযোগিতা পায়নি বলে এসব পরিবারের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমদাদুল হক বাদশা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাকলিয়ায় ডিসি রোড, শান্তিনগর, রসুলবাগ, বগাবিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনদিন ধরে পানিবন্দি এখানকার কয়েক হাজার পরিবার। অধিকাংশ বাসাবাড়ির খাটের উপর পর্যন্ত পানি উঠেছে। ডুবে গেছে রান্নাঘরের চুলা। শনিবার রাতে আমরা প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বাকলিয়ায় নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এবার জলাবদ্ধতা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আগে নগরীতে ৩০০-৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে যে দুর্ভোগ হতোনা এখন ৬০-৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। অথচ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরীকে রক্ষায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। কাজের কাজ কোনও কিছুই হচ্ছে না। সব টাকা জলে যাচ্ছে।’
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন জানান, এবারের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রিয়াজুদ্দিন বাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শনিবারের জলাবদ্ধতায় অন্তত আড়াইশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পানি বেড়েছে। এখানে কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নষ্ট হয়েছে। অনেক পণ্য স্রোতে ভেসে গেছে। এতে বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে।
তৃতীয় দিনের মতো আজও ডুবেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন। তার বাড়ির সামনে কোমর সমান পানি জমেছে। এছাড়া পানি ঢুকেছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের গুদামে। পাশাপাশি নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, মাস্টারপোল, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, বহদ্দারহাট, কমার্স কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ছোট পুল, বড় পুলসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
এদিকে, অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব বাসিন্দাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে আড়াইশ পরিবারকে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়ে যাতে মানুষের আর প্রাণ না দিতে হয় সেজন্য কাজ করছি। মাইকিং থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে। শনিবার রাতে আমি নিজেই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ২৫০টি পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি। তাদের জন্য শুকনো খাবার থেকে শুরু করে প্রতিবেলার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’