ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। সেই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।’ সোমবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫ ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের এক হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।
সংসদ নির্বাচনে ‘প্রার্থী নয়, ধানের শীষই মুখ্য’ বলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আজ আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
হয়তো এমনও হতে পারে, তোমার এলাকায় যেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে, হয়তো তুমি একজনকে পছন্দ করতে, সে হয়তো পায়নি। যে পেয়েছে তার সঙ্গে হয়তো তোমার সম্পর্ক আছে একটু কম।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ভাইরে তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছ না, তুমি তো তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছ। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ, এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ।
মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রতিটি পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব ইনশাআল্লাহ।’
‘বিশেষ একজন ছাড়া সবাই খারাপ, এটার পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে ‘আমি ভালো আর সব খারাপ’—এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি। দূঃখজনক হলেও ২০২৪ সালের ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে, সেটির বোধ হয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়, এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে, মতামত দেওয়ার অধিকার তার আছে, বক্তব্য দেওয়ার অধিকার তার আছে। কিন্তু বিশেষ একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ—এটি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি, এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।” নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। কেন নেই? বিগত যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, কেন আন্দোলন করেছি? কারণ সেখানে কোনো জবাবদিহি ছিল না। মানুষ বেঁচে আছে কী মরে যাচ্ছে, তার জবাবদিহি ছিল না। একমাত্র গণতন্ত্র সমাজে দেশে এবং রাষ্ট্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে একমাত্র নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার।’
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড এ দেশের জনগণ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘একজন গৃহবধূ ৫ তারিখের সেই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে দেশের মুদি দোকানদার, ক্ষুদ্র দোকানদার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সিএনজিচালক, বাসের হেলপার, ছাত্র, জনতা, মাদরাসার ছাত্র, ইউনিভার্সিটি, কলেজ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। ওই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছোট ছোট শিশুরা। ওই আন্দোলনে ৬৩ জন শিশু মারা গেছে।’
তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমরা যদি এগিয়ে আসো, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে এ দেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে একটি ভয়াবহ কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে। আমরা যদি আজ ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি, দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজ আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। আন্দোলনের সময় যেমন জনগণকে বুঝিয়েছিলে, তেমনি দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তাদের বোঝাতে হবে, সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’
খাল খনন, বায়ুদূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারা দেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতাকর্মীদের তা জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলোয় নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সমর্থন নেওয়া ও সমর্থন জোগাড় করার জন্য আহবান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।
আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



